কাশ্মীর থেকে ধৃত জয়েশ জঙ্গি, দিল্লিতে ড্রোন-রকেট হামলারও প্ল্যান ছিল মেডিকেল মডিউলের
বর্তমান | ১৮ নভেম্বর ২০২৫
নয়াদিল্লি: লালকেল্লা বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তে নয়া মোড়! গাড়ি বিস্ফোরণের আগে ড্রোন-রকেটের মাধ্যমে হামলার ছক কষেছিল জঙ্গিরা। আর সেই ষড়যন্ত্রের অন্যতম মূল চক্রী সন্দেহে এক জয়েশ জঙ্গিকে গ্রেফতার করল ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। ধৃতের নাম জাসির বিলাল ওয়ানি ওরফে দানিশ। একদিন আগেই জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে তাকে আটক করা হয়েছিল। তার জেরে গায়ে আগুন দেন জাসিরের বাবা ‘ড্রাই ফ্রুটস’ বিক্রেতা বিলাল আহমেদ ওয়ানি। পরে শ্রীনগরের হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, দিল্লি বিস্ফোরণের পরেই দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ‘হোয়াইট কলার টেরর মডিউল’-এর খোঁজে শুরু হয় তদন্ত। সেই পর্বেই উঠে আসে অনন্তনাগের কাজিগুন্দের বাসিন্দা জাসির ও তার কাকার নাম। দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। তদন্তকারীদের দীর্ঘ জেরার মুখে শেষপর্যন্ত ভেঙে পড়ে জাসির। লালকেল্লার রাস্তায় বিস্ফোরণে আত্মঘাতী জঙ্গি ডাঃ উমর উন নবির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা স্বীকার করে। সূত্রের খবর, কাশ্মীরের একটি মসজিদে দু’জনের আলাপ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক জাসিরকে টানা কয়েক মাস ধরে সেখানেই ধীরে ধীরে সন্ত্রাসবাদের পাঠ দেয় উমর। গত বছরের অক্টোবরে কুলগাঁওয়ের একটি মসজিদে ‘মেডিকেল মডিউল’-এর বাকি সদস্যদের সঙ্গে দেখাও করায়। সেখান থেকে জাসিরকে নিয়ে যাওয়া হয় ফরিদাবাদের আল-ফালহা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঘরে। সেখানে মডিউলের সদস্যরা মিলে ঠিক করে, জয়েশের ‘ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার’ হিসেবে কাজ করবে জাসির। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত হয়নি উমর। কারণ, জাসির ছিল তার রিক্রুট। এরপর টানা কয়েক মাস ধরে ব্রেনওয়াশ করে তাকে ফিঁদায়ে (আত্মঘাতী) হামলার জন্য তৈরি করে। কিন্তু বাড়ির অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বেঁকে বসে জাসির। জানায়, ইসলামে আত্মহত্যা নিষিদ্ধ। এরপরেই তাকে জয়েশের টেকনিক্যাল টিমে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জেরায় জাসির আরও জানিয়েছে, দিল্লির গাড়ি বিস্ফোরণের আগে বিস্ফোরক বোঝাই মডিফায়েড ড্রোন ও রকেটের মাধ্যমে হামলার ছক কষা হয়েছিল। ডাঃ উমরকে গাড়ি বোমা তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সাহায্য করার পাশাপাশি ড্রোন মডিফাই করার দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। প্রথমে ছোট ড্রোন দিয়ে হাত পাকায়। তারপর বড় ড্রোন মডিফাই করার কাজ শুরু করেছিল জাসির, যাতে সেগুলি সহজেই শক্তিশালী বোমা নিয়ে উড়তে পারে। হাই কোয়ালিটি ক্যামেরাও লাগানো হত ড্রোনগুলিতে। এর সঙ্গেই জোরকদমে চলছিল রকেট তৈরির কাজ। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে ড্রোন ও রকেটের মাধ্যমে হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস। আয়রন ডোম থাকার পরও বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে হয়েছিল তেল আভিভকে। অনেকটা সেই ধাঁচেই দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ড্রোন-রকেট হামলার ছক চালানোর পরিকল্পনা ছিল জয়েশের মেডিকেল মডিউলের। সূত্রের খবর, জাসিরের স্বীকারোক্তির পরই ড্রোন ও রকেট উদ্ধারের খোঁজে বড়োসড়ো তল্লাশি অভিযানে নামতে চলেছেন গোয়েন্দারা।