• সিজারিয়ান ডেলিভারি কমানোর নির্দেশ জারি উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যদপ্তরের
    বর্তমান | ১৮ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: নদীয়া জেলার বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে অধিকাংশ প্রসবই হচ্ছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ৯০ শতাংশই হয় সিজারিয়ান ডেলিভারি। এই পরিসংখ্যান অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্যদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানেই এই বিষয়টি উঠে আসে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান ডেলিভারি কমাতে হবে। সেইমতো বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। 

    নদীয়ার জেলাশাসক অনীশ দাশগুপ্ত বলেন, স্বাস্থ্যদপ্তরের সঙ্গে আমাদের বৈঠকে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে সিজারিয়ান ডেলিভারির সংখ্যা কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় রেফারেল নিয়ন্ত্রণ, ভেক্টর বোর্ন রোগ দমন, গুরুতর রোগীর দ্রুত শনাক্তকরণ, টিকাকরণ এবং মাতৃ–শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচির কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জেলার সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে ধারাবাহিক পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও নেওয়া হবে।

    প্রসবের ক্ষেত্রে নদীয়া জেলা হাসপাতালের ছবিটা অনেকটাই ইতিবাচক। আগে নদীয়া জেলা হাসপাতালে সিজারিয়ান প্রসব হতো প্রায় ৮০ শতাংশ। এখন তা ৬০ শতাংশ নামিয়ে আনা গিয়েছে।‌ মূলত যে সমস্ত মায়েরা প্রথমবার সন্তান প্রসব করছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে নর্মাল ডেলিভারি হচ্ছে নদীয়া জেলা সদর হাসপাতালে। এছাড়াও তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে ৩০ শতাংশ, নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ৪০ শতাংশ এবং রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ৫০ শতাংশ সিজারিয়ান প্রসব হচ্ছে। তবে নদীয়া জেলার ১৪২টি বেসরকারি হাসপাতালেই সিজারিয়ান প্রসবের সংখ্যা গড়ে ৯০ শতাংশ। 

    নদীয়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রঞ্জিত দাস বলেন, সরকারি হাসপাতালে আমরা সিজারিয়ান প্রসবের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পেরেছি অনেকটাই। তবে বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান প্রসবের সংখ্যা একটু বেশি। আমরা বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দিয়েছি নর্মাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়াতে। 

    স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সন্তানের জন্মের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসবই সবচেয়ে নিরাপদ ও উপযুক্ত। কিন্তু বর্তমান সময়ে সিজারিয়ান ডেলিভারিকে অনেকেই যেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করছেন, যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, অকারণ সিজারিয়ানের ফলে মায়ের শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়তে পারে এবং নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকিও থাকে। বিপরীতে, স্বাভাবিক প্রসবে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন না থাকায় মা ও শিশুর দ্রুত আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা বেশি হয় এবং জটিলতাও তুলনামূলকভাবে কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, একটি দেশে মোট প্রসবের মধ্যে সিজারিয়ানের হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে থাকা শ্রেয়। কিন্তু বাস্তবে বহু ক্ষেত্রেই সেই সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যা বিশেষজ্ঞদের আরও উদ্বিগ্ন করে তুলছে।

    নদীয়া জেলার বিভিন্ন ব্লক হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রোগী জেলা হাসপাতালে রেফার করার প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে। যার ফলে জেলা হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। সেই চাপ কমাতেই ব্লকের গ্রামীণ হাসপাতালে এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীকে প্রয়োজন ছাড়া রেফার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)