তারাপীঠে মা তারার দর্শনে-পুজো দিতে টাকার খেলা, ক্ষুব্ধ পুণ্যার্থীরা, টিআরডিএর বৈঠক, নির্দেশ প্রশাসনের
বর্তমান | ১৮ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ফের তারাপীঠ মন্দিরে মায়ের দর্শনে ও পুজো দিতে টাকার খেলা শুরু হয়েছে। এনিয়ে পুণ্যার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। ক্ষুব্ধ প্রশাসনিক কর্তারাও। সোমবার তারাপীঠে টিআরডিএর বৈঠকে মন্দির কমিটিকে ডেকে টাকা নিয়ে মায়ের দর্শনের ব্যবস্থা বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন মহকুমা শাসক অশ্বিন বি রাঠোর। সেইসঙ্গে খুব শীঘ্রই সকল সেবাইতকে নিয়ে বৈঠকের পাশাপাশি প্রতি মাসে রিভিউ মিটিং হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন টিআরডিএর চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায়।
টাকা দিলেই চটজলদি মা তারার দর্শন মিলছে। সাধারণ লাইনের পুণ্যার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে রাখা হচ্ছে। এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই অভিযোগ পেয়ে পূর্বতন জেলাশাসক বিধান রায় সেবাইতদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। এমনটা হতে থাকলে ট্রাস্টি গড়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তিনি ঠিক করে দিয়েছিলেন, প্রথম এক ঘণ্টা সাধারণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পুণ্যার্থীদের ঢোকানো হবে। পরে বিশেষ লাইনে থাকা ভক্তরা সুযোগ পাবেন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর সাধারণ ও বিশেষ লাইনে থাকা ভক্তদের গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। বিশেষ লাইনে পুজো দিতে মন্দির কমিটির অফিস থেকে কুপন সংগ্রহ সহ বেশ কিছু নিয়ম করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আগের অবস্থা ফিরেছে মন্দিরে। অভিযোগ, দেবী দর্শনে নিজেদের মতো করে টাকা তুলছেন পালাদার সেবাইতদের একাংশ। প্রশাসনের কাছেও সেই অভিযোগ জমা পড়েছে। এদিন আশিসবাবু ও সুকুমারবাবুর সঙ্গে বৈঠক করেন মহকুমা শাসক তথা টিআরডিএর সিইও। পরে মন্দির কমিটির পদাধিকারীদের ডেকে তা বন্ধ করার নির্দেশ দেন মহকুমা শাসক।
আশিসবাবু বলেন, কিছুদিন মন্দিরে নিয়ম চালু ছিল। আবার নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী টাকার খেলা শুরু করেছেন। সেটা কঠোর হাতে বন্ধ করার জন্য বলেছেন মহকুমা শাসক। মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, নতুন করে পুজোর লাইনে কিছু বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছিল। আগের নিয়মেই যাতে মন্দির চলে সেব্যাপারে প্রশাসনকে সহযোগিতা করব।
তারাপীঠে দ্বারকা নদের দূষণ রোধে ৩৪কোটি টাকা ব্যয়ে সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট গড়ে উঠলেও কোনও কাজে লাগছে না। ২০২২সালে তরল বর্জ্য পরিশোধনের জন্য প্ল্যান্টের কাজ শেষ হলেও লজ ও হোটেলগুলির অসহযোগিতায় এখনও তা চালু করা যায়নি। রোজই নিয়ম করে হোটেল ও রেস্তরাঁর আবর্জনা নদে ফেলা হচ্ছে। একইভাবে লজ ও হোটেলগুলির দূষিত জল দ্বারকায় গিয়ে মিশছে। পিএইচই সূত্রে জানা গিয়েছে, তারাপীঠজুড়ে মাটির তলায় পাইপ বসানো সহ একাধিক ম্যানহোল করা হয়েছে। এর আগে একাধিকবার টিআরডিএর মিটিংয়ে হোটেল ও লজের নালাগুলি সরকারি নালার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য বলা হয়। বেশিরভাগ হোটেল সেই নির্দেশ মানছে না। ফলে দ্বারকা নদে দূষণ অব্যাহত রয়েছে। গত শনিবার পিএইচইর কর্তাদের নিয়ে এলাকা ঘুরে দেখেন মহকুমা শাসক। এদিন লজ ও অ্যাসোসিয়েশনকে ডেকে সাতদিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন মহকুমা শাসক। তিনি বলেন, হোটেল ও লজের নালাগুলিকে সরকারি নালার সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যুক্ত করতে হবে। অন্যথায় প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে। আশিসবাবু বলেন, অধিকাংশ হোটেল ও লজ কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত মানছে না। তাই সাতদিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন মহকুমা শাসক। -নিজস্ব চিত্র