সাঁইথিয়ায় ১৫০টি নকল সোনার কয়েন সহ ২ প্রতারক পাকড়াও
বর্তমান | ১৮ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: সোনার নকল মুদ্রার কারবারের সঙ্গে জড়িত দুই কারবারিকে গ্রেফতার করল সাঁইথিয়া থানার পুলিশ। রবিবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ মোসড্ডা এলাকা থেকে ওই দুই কারবারিকে জালে তোলে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত শেখ স্বপনের বাড়ি লাভপুর থানার হাতিয়ায়। ধৃত চন্দন শেখ সাঁইথিয়া থানার কল্যাণপুরের বাসিন্দা। সোমবার ধৃত দু’জনকে সিউড়ি মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। ধৃতদের সাতদিন পুলিশি হেফাজতে চাওয়া হলেও তিনদিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন বিচারক। পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, ধৃতদের কাছ থেকে প্রায় ১৫০টি নকল সোনার কয়েন এবং দু’টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের মূল মাথাদের পাকড়াও করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
তবে এই প্রথম গ্রেফতার নয়। এর আগেও এই কারবারের সঙ্গে জড়িত বহু ব্যক্তিকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কারবারিরা কিছুটা ব্যাকফুটে গেলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। প্রতারণা চক্রকে নির্মূল করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই সোনার নকল কয়েনের কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে লাভপুর ব্লকের হাতিয়া গ্রামের নাম। রবিবার রাতে ওই গ্রামেরই শেখ স্বপনকে গ্রেপ্তার করেছে সাঁইথিয়া থানার পুলিশ। পুলিশের দাবি, স্বপন দীর্ঘদিন ধরেই এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত। বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তবে, এতদিন পুলিশ তার নাগাল পায়নি। তাই তার গ্রেফতারিকে ‘সাফল্য’ হিসাবেই দেখছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতারণা চক্রটি প্রথমে অজানা নম্বরে ফোন করে নিজেদের অত্যন্ত গরিব বলে পরিচয় দেয়। মাটির বাড়ি ভাঙতে গিয়ে সোনার কয়েন ভর্তি ঘড়া প্রাপ্তির গল্প শোনায়। এরপর সেগুলি সস্তায় বিক্রির টোপ দেয়। এমন ফোন পেয়ে লোভে পড়ে কেউ পাল্টা যাচাই শুরু করলে উত্তর পায়, ‘আপনি আসুন। একটা-দু’টো মোহর নিয়ে যাচাই করবেন, তারপর মনে হলে নেবেন।’ এতেই খানিকটা বিশ্বাস হয় অনেকের। শুরু হওয়া ফোনালাপ। দিনক্ষণ, জায়গা ঠিক হয়। এরপর ক্রেতা সেই জায়গায় পৌঁছলে মোহরের দরদাম শুরু হয়। কেউ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে নকল কয়েন কিনে বাড়ি ফেরেন। যদি কেউ এই নকল কারবার বুঝতে পেরে গেলে তার সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া হয়। দিনের পর দিন বহু মানুষ প্রলোভনে পড়ে এই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। তবুও কারবারে রাশ পড়েনি আজও। পুলিশ জানিয়েছে, এই নকল মুদ্রা তৈরি হয় হাতিয়া গ্রামেই।
তবে, আজও কেন এই কারবারে পুরোপুরি রাশ পড়েনি? পুলিশের একটি সূত্রেরই দাবি, এই কারবারের পিছনে রযেছে গ্রামেরই ‘দাদা’দের মদত। এই দাদাদের মাথায় আবার হাত আছে আরও বড় ‘দাদা’দের। গত জুন মাসে এই গ্রামেই নকল সোনার করবার কার হাতে থাকবে সেই নিয়ে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। বেঘোরে প্রাণ হারায় দু’জন। প্রচুর বোমাও উদ্ধার হয়। ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল এলাকার দুই ‘দাদা’র। সেই কারণেই কি প্রতারণার কারবার ঠেকাতে পুলিসকে হিমশিম খেতে হচ্ছে? প্রশ্ন থাকছেই।-নিজস্ব চিত্র