• জামাই কার্তিক, ন্যাংটা কার্তিককে দেখতে কাটোয়ায় আসেন ভক্তরা
    বর্তমান | ১৮ নভেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: বারবণিতাদের হাত ধরেই কার্তিকপুজো শুরু হয়েছিল কাটোয়ায়। সেই পুজোকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন ‘বাবু’রা। কাটোয়ার এই কার্তিক পুজোয় এখন উৎসবে মেতে ওঠেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। কাটোয়ায় নানা নামে পূজিত হন দেবসেনাপতি। জামাই কার্তিক, ন্যাংটা কার্তিক, বাংড়া কার্তিক দেখতে দূরদূরান্ত থেকেও মানুষ কাটোয়ায় আসে। ভাগীরথী পাড় লাগোয়া কাটোয়া শহরে একসময় লবণের ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ভাগীরথীর পাড়ে লবণগোলা পাড়া সেই ইতিহাসের সাক্ষী। নদীকেন্দ্রিক ব্যবসার প্রসার ঘটায় শহরে নানা সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, জমিদার বসবাস করতেন। আর নদীর পাড় বরাবর চুনারীপাড়ায় থাকতেন বারবণিতারা। জানা গিয়েছে, সেই বারবণিতাদের হাত ধরেই ‘ন্যাংটা কার্তিক’ পুজো শুরু হয়েছিল। তারপর ‘বাবু’ সমাজ এই কার্তিক পুজোর পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে। ধীরে ধীরে শহরে শুরু হয় কার্তিক লড়াই। শহরের দু’টি রাস্তার মোড়ে শোভাযাত্রা সহ বাবুদের ঠাকুর বের করা হতো। পুজোয় বাজনা, ফরাসের আলোর ব্যবস্থায় একে অপরকে টেক্কা দিতেন বাবুরা। সেটাই কার্তিক লড়াই। সেই ন্যাংটা কার্তিক পুজো এখন সর্বজনীন রূপ পেয়েছে। এখানে মনস্কামনা পূরণে নানা মানত করেন বাসিন্দারা। এখানকার বাংড়া কার্তিকও ব্যতিক্রমী। এখানে বাংড়া কথার অর্থ যোদ্ধা। যুদ্ধের দেবতা বলেই এমন নাম দেওয়া হয়েছে।

    উনিশ শতকে হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশনারী হয়ে এসেছিলেন জুনিয়র উইলিয়াম কেরি। পরে তিনি কাটোয়া শহরে আসেন। বাঙালি সমাজে নারীশিক্ষার প্রসারে কেরি সাহেব কাজ শুরু করেন। কাটোয়া শহরেই মেয়েদের জন্য দু’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। তাঁর স্ত্রী মেরি  কিন্সি মেয়েদের মধ্যে কুসংস্কার দূরীকরণে পাড়ায় পাড়ায় প্রচার শুরু করেছিলেন। কেরি দম্পতি একটি দাতব্য চিকিৎসালয়ও খুলেছিলেন। এলাকার জলবাহিত রোগে আক্রান্তদের সেখান থেকে তাঁরা ওষুধ দিতেন। কাটোয়ার কবিরাজপাড়ার সেই চিকিৎসালয় এখন আর নেই। নারীশিক্ষার উদ্দেশ্যে চালু করা স্কুলও নাম বদলে শহরের অন্য প্রান্তে নতুনভাবে গড়ে উঠেছে। তবে উইলিয়াম কেরিকে সম্মান জানিয়ে শহরের সুবোধ রোডে এখনও সাহেব কার্তিক পুজো হয়। ওই রোডেই আর একটি জনপ্রিয় পুজো জামাই কার্তিক। পেশায় শিক্ষক তথা গবেষক তুষার পণ্ডিত বলেন, শহরে বহু প্রাচীন কার্তিকপুজো এখনও নিষ্ঠার সঙ্গে আয়োজিত হয়। কার্তিক লড়াই ঘিরে শহরে আনন্দের হাট বসে। • নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)