• কালীনগর স্টেশন থেকে মহিশুড়া চৌমাথা যাওয়ার রাস্তায় নেই কোনও আলো, সমস্যা
    বর্তমান | ১৮ নভেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: নবদ্বীপের মহিশুড়া পঞ্চায়েতের চৌমাথা মোড় থেকে কালীনগর স্টেশন পর্যন্ত নেই পথবাতি। ফলে সন্ধ্যার পর কালীনগর স্টেশন যাওয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি ডুবে থাকে অন্ধকারে। এদিকে সাপের উপদ্রব বেড়েছে। বেড়েছে বাইরের অপরিচিত লোকের আনাগোনা। মাঝে  মধ্যে গ্রামে চুরিও হচ্ছে। সন্ধ্যার পর ওই রাস্তা দিয়ে পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রামের পড়ুয়া থেকে বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে হয়। রাতের বেলায় ঘন অন্ধকারে পথ চলতে গ্রামবাসীদের মোবাইল বা টর্চের আলোই ভরসা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, লাইটের জন্য বারবার পঞ্চায়েতকে জানিয়েও লাভ হয়নি। 

    মহিশুড়া পঞ্চায়েতের উপ প্রধান আকমল সর্দার বলেন, কালীনগর স্টেশন যাওয়ার রাস্তায় আলোর সমস্যা রয়েছে। পাড়ায় সমাধানে কিছু রাস্তার কাজ দেওয়া আছে। তবে আলোর বিষয়টি দেওয়া হয়নি। পঞ্চায়েতের অর্থ সীমিত।  রাস্তাঘাট করব, নাকি লাইট লাগাব। তবে এ ব্যাপারে জেলা ও ব্লক স্তরে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে অর্থ বরাদ্দ হলে তবেই লাইট লাগানো সম্ভব। কিন্তু কোনও অর্থ পাচ্ছি না। এই দেড় থেকে দু› কিলোমিটার রাস্তার মহিশুড়ার চৌমাথার মোড়ে একটি হাই মাস্ট এবং আশপাশ এলাকায় দু’-একটি সৌরশক্তিচালিত লাইট লাগানো হয়েছে। আর কোনও আলো নেই। 

    উল্লেখ্য, প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষের বসবাস নবদ্বীপ ব্লকের মহিশুরা পঞ্চায়েত এলাকায়। এই গ্রামগুলির অধিকাংশ মানুষই শ্রমজীবী। নবদ্বীপ দক্ষিণ প্রান্তে মহিশুড়া পঞ্চায়েত। পঞ্চয়েতের শেষ প্রান্তে মহিশুড়া চৌমাথার মোড়ে আগে কয়েক মাস আগে লাগানো হয়েছে উচ্চক্ষমতার বাতিস্তম্ভ। গ্রামের ওই রাস্তায় নামমাত্র দু’-একটি সৌরশক্তি চালিত সোলার লাইট লাগানো হয়েছে। কিন্তু  কালীনগর স্টেশন যাওয়ার মূল রাস্তায় পথবাতি নেই। অথচ নবদ্বীপ মহিশুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকায় রয়েছে পূর্ব রেলের হাওড়া-কাটোয়া ডিভিশনের অধীনে কালীনগর স্টেশন। এই স্টেশন হয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত যাতায়াত করেন তিন থেকে চারটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। এই পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের স্টেশনে যাওয়ার প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তায় নেই আলো।

    মহিশুড়া ভাটাপাড়ার গৃহবধূ মনোহরা বিবি বলেন, কালীনগর স্টেশন থেকে এই রাস্তায় কোনও লাইট নেই। গ্রামের কিছু বাসিন্দা তাঁদের বাড়ির লাইটটি রাস্তার দিকে লাগিয়ে রাখেন। সেই আলোতে কিছু মানুষের উপকার হয়। কিন্তু আমাদের মতো গরিব মানুষকে তো কারেন্টের বিল দিতে হয়। তারপরে সাপের উপদ্রব। আমার নাতিকে পড়তে দিয়ে ও নিয়ে আসতে হয়। সেদিন সন্ধ্যার সময় ওকে  নিয়ে আসছি, দেখি রাস্তায় বড় একটা বিষধর গোখরো। 

    মহিশুড়া ভাটাপাড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ পাপিয়া খাতুন বলেন,  এই রাস্তায় লাইট না থাকায় রাত্রিবেলায় বেরতে অসুবিধা হয়। বাড়ির বাচ্চারা পড়াশোনা করতে যায়। তারা যতক্ষণ না বাড়ি ফেরে খুবই চিন্তায় থাকি। মহিশুড়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য মাঝের চড়ার বাসিন্দা নাজিবুল শেখ বলেন, অন্ধকারে মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বাইরের লোকজন ঢুকে পড়ছে মাঝেমধ্যে। গ্রামের বাড়িগুলোতে চুরি হচ্ছে। মহিশুড়া মাঝের পাড়ার বাসিন্দা পঞ্চম শ্রেণির শরিফা খাতুন জানান, দিনের বেলায় যখন পড়তে যাই তখন মনে করে সঙ্গে টর্চ নিয়ে যেতে হয় রাতে ফেরার জন্য। অন্ধকারে যাতায়াত করতে খুব ভয় লাগে।

    মাঝের চড়ার বাসিন্দা টোটো চালক মেহেবুব শেখ বলেন, এই পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ রাত করে ট্রেন পথে ফেরেন। সে কারণে ট্রেনের প্যাসেঞ্জার নিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারে গাড়ি নিয়ে যাওয়াই যায় না। বাইক, টোটো, অটো সহ বিভিন্ন ছোট যানবাহনে মহিশুড়া গ্রাম হয়েই পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাট থানা এলাকায় অনেকেই যাতায়াত করেন। তাঁদেরও অসুবিধা হচ্ছে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)