• সোনার দাম বাড়ায় বিয়ের মরশুমে বিক্রি নিয়ে চিন্তিত শাঁখা কারবারিরা
    বর্তমান | ১৮ নভেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, তেহট্ট:  সামনের অগ্রহায়ণ মাস থেকেই বিয়ের মরশুম শুরু। তার আগেই সোনার দাম বাড়ায় চিন্তায় শাঁখা ব্যবসায়ী ও কারিগররা। বিয়ের কথা ভেবে দিন রাত এক করে শাঁখা তৈরি শুরু করলেও বিক্রিবাটা নিয়ে চিন্তায় কারিগররা। এমনিতেই সোনার দাম বাড়ায় শাঁখার ব্যবসা কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরা। যদিও সাধারণ  শাঁখার বিক্রি আগের চেয়ে ভালো হলেও কাঁচা মাল ও মজুরি বাড়ার কারণে সেভাবে লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।  

    স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, নদীয়ার মুরুটিয়ার বালিয়াডাঙা, শঙ্খনগর সহ আশপাশের পাঁচটি  গ্রামের প্রায় ৮০০ কারিগর এই শাঁখা তৈরির কাজে যুক্ত। এখানকার তৈরি শঙ্খ ও শাঁখার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি আসাম ও ত্রিপুরার মহিলারাও অপেক্ষায় থাকেন।  দুর্গাপুজো ও ধনতেরসের সময় শঙ্খ ও শাঁখার বিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়। কিন্তু এবছর সোনার দাম বাড়ায় সেভাবে শাঁখা বিক্রি হয়নি সোনার দোকানগুলিতে। ফলে সেই শাঁখা এই বিয়ের মরশুমেও বিক্রি হবে কি না তাই নিয়ে চিন্তায় কারবারিরা। 

    মুরুটিয়ার শাঁখা ব্যবসায়ী অরূপ পাল বলেন, পুজোর আগে প্রতিবছর কাজের চাপ বাড়ে। কিন্তু সম্প্রতি দশ গ্রাম সোনার দাম লক্ষাধিক টাকা হওয়ায় ভাল ব্যবসার আশা নেই। কারণ সোনার সঙ্গে শাঁখার ব্যবসার সম্পর্ক আছে। তিনি আরও বলেন, সাধারণ শাঁখা আগের চেয়ে ভালো বিক্রি হলেও তাতে লাভের পরিমাণ কমেছে। অথচ কাঁচামাল, মজুরি সহ সব জিনিসের দাম গড়ে ১০ শতাংশ হারে বেড়েছে।

     শাঁখার কারিগর ভক্তদাস বৈরাগ্য বলেন, বালিয়াডাঙা ও শঙ্খনগর দুই গ্রামে প্রায় একশো জন ব্যবসায়ী ও ৮০০ জন কারিগর প্রতিদিন  শঙ্খ ও শাঁখা কাটার কাজ করেন। গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবারের একমাত্র রুজি-রুটির ভরসা শাঁখার ব্যবসা। এবছর কাঁচামালের জোগান যেমন কম, তেমনি দামও বেশি। আবার তৈরি মালের চাহিদাও কমেছে। ফলে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আমরা সবাই খুব চিন্তায় রয়েছি। 

    বংশীবদন পাল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রায় একশো বছর আগে ঠাকুরদার সময় থেকে এখানে  শাঁখা তৈরির কাজ হয়। বর্তমানে আমার কারখানায় বারো জন কারিগর কাজ করেন। অনেক আগে থেকে আমাদের কাঁচামাল সরাসরি শ্রীলঙ্কা বা চেন্নাই থেকে আসত। তাতে কম দামে ভাল মানের শঙ্খ পাওয়া যেত। কিন্তু গত বছর থেকে শ্রীলঙ্কার পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে মহাজনদের থেকে চেন্নাই-এর শঙ্খ নিতে হয়। ফলে কাঁচামালের দাম অনেক বেশি পড়ে যায়। এখানে তৈরি শাঁখা ও শঙ্খ সবচেয়ে বেশি যায় আসাম ও ত্রিপুরায়। বাজার বেশ মন্দা। স্থানীয় কারিগর প্রসেঞ্জিৎ ঘোষ বলেন, গ্রামের মানুষজন সবাই শাঁখার কাজে যুক্ত। এবছর তৈরি মালের চাহিদা কিছুটা কম। তবে কয়েক দিনের মধ্যে হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে। তাই বিয়ের মরশুমের আগে জোরকদমে কাজ চলছে প্রতিটি কারখানায়। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)