মাসের নির্দিষ্ট কয়েকদিন ছাড়া মিলবে না রেশন, অসম মডেল চালুর পথে কেন্দ্র
বর্তমান | ১৮ নভেম্বর ২০২৫
কৌশিক ঘোষ, কলকাতা: রাজ্যে এখন মাসে প্রায় ১৬ দিন চলে ‘দুয়ারে রেশন’ পরিষেবা। এর মাধ্যমে কোনও গ্রাহক খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে না পারলে যে কোনও শনি-রবিবার রেশন দোকানে গিয়েও তা পেতে পারেন। প্রত্যেক মাসের প্রথম ও শেষদিন এবং প্রতি সোমবার রেশন বণ্টন বন্ধ থাকে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট দিনে রেশন সংগ্রহ করতে না পারলেও রাজ্যের গ্রাহকদের সমস্যায় পড়তে হয় না। এই ব্যবস্থাই এবার বদলে দিতে চাইছে কেন্দ্রের মোদি সরকার! পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের সব রাজ্যে ‘অসম মডেল’ চালু করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রক। অসমে প্রতি মাসের ১-১০ তারিখ রেশন দোকান থেকে খাদ্যশস্য বণ্টন হয়। মন্ত্রকের ২০২৫-২৬ সালের অ্যাকশন প্ল্যানের ৯ নম্বর পয়েন্টে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। নয়া ব্যবস্থা কার্যকর করতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
অ্যাকশন প্ল্যানে বলা হয়েছে, রেশনের খাদ্যশস্য বণ্টন নিয়ে গোটা দেশে একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকা দরকার। কেন্দ্রের তরফে ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজ্যের খাদ্য সচিবদের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। বিজেপি শাসিত অসমে যে ব্যবস্থা চালু হয়েছে, সেটাই অনুকরণের পরামর্শ দেওয়া হয় সেখানে। তবে রাজ্য খাদ্যদপ্তর সূত্রে খবর, এ বিষয়ে এখনও কোনও মতামত তারা কেন্দ্রকে পাঠায়নি।
তবে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বিষয়টি নিয়ে খাদ্যমন্ত্রকের সক্রিয় হওয়ার পিছনে আরও কারণ আছে। রেশন ডিলারদের সংগঠন ডিলারদের কমিশন বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির উপর ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে। প্রযুক্তির প্রয়োগে রেশন বণ্টন ব্যবস্থায় এখন অনেক স্বচ্ছতা এসেছে। ডিলাররা বলছেন, তাঁরাও স্বচ্ছভাবে কাজ করতে চান। কিন্তু তার জন্য কমিশন বাড়িয়ে তাঁদের আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। ডিলারদের সর্বভারতীয় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানিয়েছেন, মাসে অন্তত ৫০ হাজার টাকা আয়ের ব্যবস্থা করার দাবি তুলেছেন তাঁরা। কিন্তু কেন্দ্র কমিশন বাড়িয়ে নিজেদের উপর আর্থিক চাপ বৃদ্ধি করতে নারাজ। বরং তারা চাইছে, প্রয়োজনে রাজ্য সরকারগুলি বর্ধিত হারে কমিশনের দায়িত্ব নিক। এই টানাপোড়েনের মধ্যে কেন্দ্র রেশন ডিলারদের জন্য বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতে কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে। রেশন দোকান থেকে মানুষকে বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়া, ন্যায্য মূল্যে পুষ্টিকর খাদ্য বিক্রি সহ নানা প্রকল্প আনা হয়েছে। রেশন দোকানগুলিকে ‘জন পোষণ কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত সেই কারণেই। এখন কেন্দ্র চাইছে, নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বণ্টন শেষ করে বাকি দিন ‘জন পোষণ কেন্দ্র’ চালিয়ে এবং অন্যান্য কাজের মাধ্যমে আয় বাড়ান ডিলাররা।