• ভূমিষ্ঠের সময় ওজন মাত্র ৬৪০ গ্রাম আড়াই মাসের লড়াইয়ে সুস্থ সদ্যোজাত, সাফল্য বারাসত মেডিকেলের
    বর্তমান | ১৮ নভেম্বর ২০২৫
  • শ্যামলেন্দু গোস্বামী, বারাসত: ভূমিষ্ট হওয়া সদ্যোজাতের ওজন ছিল মাত্র ৬৪০ গ্রাম। ফুসফুস, হাত-পায়ের গড়ন সম্পূর্ণ নয়। চোখ ফোটেনি। শরীর জুড়ে একাধিক অসুস্থতা। সাধারণত সদ্যোজাতের ওজন থাকে দু’কেজির বেশি। ফলে, এই অপরিণত সদ্যোজাতকে বাঁচানোই চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছিল বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কাছে। এসএনসিইউতে রেখে টানা আড়াই মাস ধরে লড়াইয়ের পর ওই শিশুকে স্বাভাবিক করে সোমবার পরিবারের হাতে তুলে দিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরকারি হাসপাতালের এই পরিষেবায় খুশি মা হালিমা খাতুন ও বাবা খুরশিদ আলম।

    বারাসতের কদম্বগাছি এলাকার গৃহবধূ হালিমা খাতুন। স্বামী খুরশিদ পেশায় শ্রমিক। গত ২১ আগস্ট হঠাৎ প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় হালিমার। পরিবারের লোকজন ডেলিভারির জন্য তাঁকে ভর্তি করেন বারাসত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে, সাড়ে ছ’মাসের মাথায় নর্মাল ডেলিভারি হয় তাঁর। প্রসবের পর দেখা যায়, পুত্রসন্তানের ওজন মাত্র ৬৪০ গ্রাম। তবে অপরিণত। চিকিৎসকদের মতে, দেখে মনে হয়েছিল একটি ছোট মাংস পিণ্ড। চোখ, নাক, কানের গঠন তখনও ভালোমতো হয়নি। ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গের বিকাশও হয়নি। এই সব ক্ষেত্রে সব রোগীকেই এতদিন রেফার করে দিত বারাসত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালের এসএনসিইউতে রেখে ঝুঁকি নিয়েই সদ্যোজাতের চিকিৎসা করেন চিকিৎসকরা। অবশেষে এই লড়াইয়ে জিতলেন তাঁরা। প্রায় আড়াই মাস হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করার পর সদ্যোজাত ও তার মাকে পরিবারের হাতে তুলে দিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সদ্যোজাতের মা ও পরিবারের সদস্যরা সরকারি হাসপাতালের এই পরিষেবায় অত্যন্ত খুশি। আবেগে হালিমা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, সন্তান যে বাঁচবে, এই আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। বারাসত হাসপাতালের ডাক্তাররা অসাধ্য সাধন করেছেন। অনেকে বলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হয় না। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা অন্য। 

    হাসপাতালের সুপার ডাঃ সুব্রত মণ্ডল বলেন, আড়াই মাস শিশুটিকে এসএনসিইউতে রেখে চিকিৎসা করা হয়েছে। চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন শিশু বিশেষজ্ঞ ভাস্বতী ঘোষাল। চিকিৎসক ও নার্সরা মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করেছেন। এখন সদ্যোজাতের ওজন দেড় কেজি। সুস্থ অবস্থায় তাকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে ডাঃ ভাস্বতী ঘোষাল বলেন, এটা ছিল অপরিণত প্রসব। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। আর সেটাতে জিতলাম। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে ভালো লাগছে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)