একই এপিক নম্বরে ২০০ ভোটার! SIR-এর মাঝে তমলুকের একাধিক বুথে আতঙ্ক
প্রতিদিন | ১৮ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুক: ভোটার তালিকায় থাকা একাধিক ব্যক্তির একই এপিক নম্বর। এনুমারেশন ফর্ম পুরণ পর্বে তা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়া ওই ভোটাররা বর্তমানে দফায় দফায় ভিড় জমাচ্ছেন তৃণমূলের শিবিরে। স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি শুরু হওয়া এসআইআর প্রক্রিয়ায় এনুমারেশন ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে ভোটারদের সুবিধার্থে হেল্প ডেস্ক খুলেছে শাসক থেকে বিরোধী সব দলই। আর এই পরিস্থিতিতে তমলুক বিধানসভার শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের রঘুনাথপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক বুথে ২০০২ সালে দুই শতাধিক ভোটারের এপিক নম্বর একই রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তালিকা দেখে রীতিমতো তাজ্জব সকলেই।
এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ২০০২ সালের প্রকাশিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, একাধিক বুথের ভোটার কার্ডের এপিক নম্বর একই রয়েছে বলে অভিযোগ। ফলে আতঙ্কিত ভোটাররা এখন ভিড় জমাচ্ছেন পঞ্চায়েত অফিসের সামনে যুব তৃণমূলের এসআইআর সহায়তা ক্যাম্পে। এলাকার বাসিন্দা কবিতা প্রধান পড়িয়া বলেন, “এসআইআরের জন্য এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে আমার-সহ আমার পরিবারের অনেকেরই একই এপিক নম্বর রয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ক্যাম্পে গিয়ে দেখি যে, সেখানেও আমার মতোই অনেকের এপিক নম্বর এক।” এই বুথের পালপাড়ায়ও রীতিমতো আতঙ্কের ছায়া।
আতঙ্কিত জগন্নাথ পাল বলেন, “এসআইআর নিয়ে নির্বাচন কমিশনের যেভাবে কড়াকড়ি, তাতে এমনিতেই আমরা আতঙ্কিত। আর তার মধ্যেই আমাদের এপিক নম্বর সকলের প্রায় একই। এখন আমরা গ্রামের মানুষ কোথায় যাব, বুঝতে পারছি না। এই পরিস্থিতিতে যদি আমাদের ভোটার তালিকা থেকে নাম বাতিল হয়ে যায়, তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব?” একই অভিযোগ তাপসী পালের। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের ভুলের দায় আমরা নেব কেন? পাশের রাজ্য বিহারে যেসব হচ্ছে শুনেছি, তাতে আমরা এমনিতেই আতঙ্কিত। আমরা চাই অবিলম্বে এই জটিলতা কাটিয়ে আমাদের ভোটার তালিকা সংশোধন হোক।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু তাই নয়, কোথাও কোথাও আবার ওই ভোটার তালিকায় বহু মানুষের নামের পাশে এপিক নম্বর খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। একই পরিস্থিতি এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ধুরপা, মহিষদা, রঘুনাথপুর, তরঙ্গাখালী-সহ বিভিন্ন এলাকায়। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতা জয়দেব বর্মন বলেন, “যুব তৃণমূলের পক্ষ থেকে এনুমারেশন ফর্ম পূরণের শিবির চলাকালীন একটা অভূতপূর্ব বিষয় প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, এই এলাকার একাধিক বুথের ভোটারদের এপিক নম্বর একই রয়েছে। যখন নির্বাচন কমিশন বলছে, পরিচ্ছন্ন ভোটার তালিকা করতে হবে, অথচ, দেখা যাচ্ছে, ২০০২-এর ভোটার তালিকা খুলতেই মানুষ বিভ্রান্তির মুখে পড়ছেন। তাই এই বিষয়টা কিভাবে সুরাহা হবে, তা নিয়েও আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি।”
শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুমিত সামন্ত বলেন, “রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশমতো এনুমারেশন ফর্ম পূরণে আমরা ভোটারদের সমস্যা হলে সহায়তা করছি। আর তার মধ্যেই একই এপিক নম্বর কি করে একাধিক ব্যক্তির হতে পারে, তা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন উঠেছে। আমরা জানতে চাই কেন নির্বাচন কমিশনের ভুলে ভরা এপিক নম্বরের ভোটার তালিকাকে সামনে রেখে বাংলাকে ষড়যন্ত্র করে দখল করার চেষ্টা হচ্ছে। এমনকী কারও কারও ভোটার তালিকায় কোনও এপিক নম্বরই নেই।” যদিও এবিষয়ে শহিদ মাতঙ্গিনীর বিডিও বলেন, “বিষয়টি আমরা জানতে পেরেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের চেষ্টায় রয়েছি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশমতো পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” এই ব্লকের ১৫৫ নম্বর বুথের বিএলও কৃষ্ণ গোপাল পাল বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্দেশমতো ভোটার তালিকা অনুযায়ী আমাদের এনুমারেশন ফর্ম পুরণ করতে হচ্ছে। তবে সমস্যার এই বিষয়টি আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি।”