• SIR ফর্মে ইচ্ছাকৃত ভুল তথ্য লিখলে চরম শাস্তি!
    আজকাল | ১৮ নভেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দফার 'এসআইআর' প্রক্রিয়া। বাংলায় এর আগে 'এসআইআর' প্রক্রিয়া হয় ২০০২ সালে, বাংলায় তৎকালীন বাম সরকারের আমলে। প্রায় দু'দশক পেরিয়ে, ফের এসআইআর। প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই, একদিকে রাজ্যে যেমন রাজনৈতিক বিবাদ, শাসক-বিরোধী সুর চড়েছে সপ্তমে, পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। ইতিমধ্যে রাজ্যের নানা প্রান্তে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা উঠে এসেছে, পরিবারের পরিজন, রাজ্যের শাসক দল,  মৃত্যুর কারণ হিসেবে এসআইআর আতঙ্কের কথা উল্লেখ করেছে। এই পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন ধরে চলল ফর্ম বিতরণ। 

    নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে রাজ্যজুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য SIR প্রক্রিয়ায় 'এনুমারেশন ফর্ম' বিতরণ আরও দ্রুত, পরিষ্কার করতে জারি করা হয়েছে একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা। ২৮ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত যাঁদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে, তাঁদের বেশিরভাগের কাছেই ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে নতুন এনুমারেশন ফর্ম। এবার শুরু হল তথ্য যাচাই ও ফর্ম জমা দেওয়ার পর্ব।

    রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তরের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ফর্ম বিতরণ প্রায় সম্পূর্ণ হয়েছে। মোট ভোটার সংখ্যা ৭,৬৬,৩৭ ৫২৯ জনের মধ্যে ফর্ম বিতরণ হয়েছে ৭,৬৩,০০১৬৩ টি, অর্থাৎ এটি শতাংশের হিসাবে ৯৯.৫৬% , এবং অনলাইন বা ডিজিটালের মাধ্যমে ফর্ম জমা পড়েছে '৭৩,১৯,৯২৭' টি ফর্ম অর্থাৎ শতাংশের নিরিখে ৯.৫৫ শতাংশ ফর্ম বিলি হয়েছে বলেই জানিয়েছে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দপ্তর।

    নির্বাচন দপ্তর জানিয়েছে, প্রতিটি এনুমারেশন ফর্মে একটি ইউনিক কিউআর কোড রয়েছে। আবেদনকারীকে নিজস্ব স্বাক্ষর বা বুড়ো আঙুলের ছাপ দিতে হবে। ভুল তথ্য থাকলে সেটি কেটে দিয়ে একই সারির ফাঁকা স্থানে সঠিক তথ্য লিখতে হবে। 

    বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন অভিবাসী শ্রমিক বা শারীরিক অসুবিধার কারণে আবেদনকারী স্বাক্ষর দিতে না পারলে, সেই পরিবারের অন্য কোনও সদস্য, যাঁর নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে, তিনি আবেদনকারীর হয়ে ফর্মে স্বাক্ষর করতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে স্বাক্ষরকারীর পূর্ণ নাম ও আবেদনকারীর সঙ্গে সম্পর্ক উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।

    দুটি কপি ফর্ম পূরণ করতে হবে—একটি কপি নেবেন বিএলও, অন্যটি স্বীকৃতি-সহ আবেদনকারীর কাছে থাকবে। বাড়ি পরিদর্শনের সময় বিএলও সরাসরি BLO অ্যাপে ভোটারের ছবি তুলবেন। ফর্মে ছবি আটকানো ঐচ্ছিক হলেও অনুমোদিত।

    নির্বাচন দপ্তর জানিয়েছে, মৃত ভোটার, স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত ভোটার বা ডুপ্লিকেট ভোটারের তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে, যাতে তালিকা শুদ্ধিকরণে সুবিধা হয়। যদি কেউ ফর্মের অপব্যবহার করে মৃত্যু, স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত বা সদৃশ ভোটারের ক্ষেত্রে ভুল তথ্য প্রদান করে তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে জমা দিলে Representation of People Act, 1950–এর ধারা ৩১ অনুযায়ী এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানার মুখে পড়তে হতে পারে।

    অন্যদিকে বিএলও-র বিরুদ্ধে মিথ্যা যাচাইয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ধারা ৩২ অনুযায়ী শাস্তির বিধান রয়েছে। কারণ এবার পুরো প্রক্রিয়াই হচ্ছে ডিজিটাল—অর্থাৎ আবেদনকারীর তথ্য, নথি, স্বাক্ষর, ছবি—সবই ডিজিটাল আকারে সংরক্ষণ থাকবে, যার মাধ্যমে ভুল তথ্যদাতাকে সহজেই শনাক্ত করা যাবে।

    বুথ লেভেল এজেন্টদের (BLA) ক্ষেত্রেও নতুন নীতিমালা কার্যকর হয়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০টি ফর্ম জমা দিতে পারবেন তাঁরা। পাশাপাশি সাধারণ কাগজে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে জানাতে হবে—ফর্মে দেওয়া তথ্য সত্য এবং ভোটাররা তাঁদের উপস্থিতিতেই স্বাক্ষর করেছেন। ঘোষণায় ফোন নম্বর, ঠিকানা, পার্ট নম্বর ও সিরিয়াল নম্বর উল্লেখ বাধ্যতামূলক।

    যাঁরা এখনও এনুমারেশন ফর্ম পাননি, তাঁদের জন্য রয়েছে হেল্পলাইন। ভোটাররা ১৯৫০ টোল-ফ্রি নম্বরে কল করতে পারবেন। এছাড়াও অফিস সময়ে 033-2231-0850 নম্বরে ফোন, WhatsApp (9830078250) অথবা ইমেল (ceo-election-wb@nic.in)–এর মাধ্যমে নাম, বিধানসভা নাম, পার্ট নম্বর ও সিরিয়াল নম্বর জানিয়ে ফর্মের অনুরোধ করতে পারবেন।

    এস আই আর প্রক্রিয়ায় এনুমারেশন ফর্ম পূরণে সহায়তার জন্য BLO, সুপারভাইজার, AERO, ERO ও DEO–র পাশাপাশি যেকোনো সময় সাহায্য চাইতে পারবেন দুই নম্বরে—1950 এবং 033-2231-0850।
  • Link to this news (আজকাল)