• SIR নথি পুড়েছে আগুনে, পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন ওঁরা
    আজকাল | ১৮ নভেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাত্র তিন দিন আগে প্রদীপের আগুনে সব হারিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা ব্লকের ২ নম্বর নিশিন্দ্রা কলোনী পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা অপূর্ব কুমার বিশ্বাস। ঠাকুর ঘরে রাখা প্রদীপ থেকে আগুন লেগে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর এনটিপিসি-র ঠিকা শ্রমিক অপূর্ব বিশ্বাস এবং তার পরিবারের সদস্যদের যাবতীয় নথি আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। 

    তারপর থেকেই ওই পরিবার নথি না থাকার জন্য 'দেশ ছাড়তে হতে পারে' এমন আতঙ্কে ভুগছিলেন। ফরাক্কা প্রশাসন ওই পরিবারের কথা জানতে পারার পরই ইতিমধ্যে তাঁদের হাতে এক প্রস্থ ত্রাণ তুলে দিয়েছেন। এর পাশাপাশি মঙ্গলবার সকালে ওই পরিবারের কর্তা অপূর্বকে বিডিও অফিসে ডেকে তাঁর হাতে ওই পরিবারের তিনজন সদস্যের জন্য নতুন করে  এসআইআর ফর্ম তুলে দিলেন বিডিও জুনায়েদ আহমেদ। ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম প্রতিশ্রুতি দিলেন ওই পরিবারের  মাথায় ছাদের ব্যবস্থা তিনি আবার করে দেবেন। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই ফরাক্কা ২ নম্বর নিশিন্দ্রা কলোনী এলাকায় যুধিষ্ঠির বিশ্বাসের দুই ছেলে অপূর্ব বিশ্বাস এবং বিষ্ণু কুমার বিশ্বাস এক বাড়িতেই থাকেন।  অপূর্ব ফরাক্কা এনটিপিসি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঠিকা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।  বিষ্ণু মালদা জেলায় শ্রমিকের কাজ করেন। নিশিন্দ্রা কলোনীর বাড়িতে অপূর্ব ,বিষ্ণু  ছাড়াও অপূর্বর স্ত্রী লক্ষ্মী বিশ্বাস এবং ওই দম্পতির দুই কন্যা এবং এক সন্তান থাকেন। 

    শনিবার সন্ধে নাগাদ অপূর্ব এবং বিষ্ণু নিজেদের কাজের জন্য বাড়িতে ছিলেন না। অপূর্বর স্ত্রী লক্ষ্মী বিশ্বাস গৃহদেবতার পুজো সেরে ঠাকুরের সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে দুই মেয়ে এবং ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় একটি মন্দিরে গিয়েছিলেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দারা ওই বাড়ি থেকে  গ্যাস সিলেন্ডার বিস্ফোরণের প্রচন্ড শব্দ শুনতে পান। 

    এলাকাবাসী অপূর্বর বাড়ির সামনে গিয়ে দেখতে পান গ্যাস সিলিন্ডার থেকে লাগা আগুনে ঘরের মধ্যে থাকা সমস্ত কিছু পুড়ে গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে এলাকাবাসীই  আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান। পরে ধুলিয়ান এবং এনটিপিসি থেকে  দমকলের দু'টি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

    আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ছাই হয়ে যাওয়া বাড়ির ভেতরে ঢুকে অপূর্ব এবং পরিবারের লোকেরা দেখতে পান তাদের জমিয়ে রাখা টাকা, সোনার গয়না সহ যাবতীয় নথি এবং ছেলে মেয়েদের বই পত্র পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। 

    অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় ওই পরিবারের এসআইআর ফর্মগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। তার সঙ্গে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, জন্ম সার্টিফিকেট, ব্যাংকের পাসবুক  পুড়ে যাওয়ায় ওই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এসআইআর শেষ হলে দেশ ছাড়া হওয়ার আতঙ্ক চেপে বসেছিল। 

    ফরাক্কার বিডিও জুনায়েদ আহমেদ বলেন, 'অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার আগেই ওই পরিবারের তিনজন সদস্যের কাছে  এসআইআর ফর্ম বিলি করা হয়ে গিয়েছিল।  কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেগুলি পুড়ে গিয়েছে। এই খবর পাওয়ার পরেই আমি আজ তাদের হাতে নতুন এসআইআর ফর্ম তুলে দিয়েছি। এর পাশাপাশি  মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ওই পরিবারের জন্য কীভাবে নতুন আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ড করা যায় তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।' বিডিও বলেন, 'ইতিমধ্যেই ওই পরিবারের হাতে ত্রিপল, কাপড়, কম্বল সহ অন্য বেশ কিছু জিনিস তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই পরিবারকে সরকারি কোনও প্রকল্প থেকে    ঘর করে দেওয়া যায় কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।' 

    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরিবারের সদস্যদের নাম ২০০২- এর ভোটার তালিকায় ছিল। তার ফলে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড পুড়ে গেলেও ওই পরিবারের  সদস্যদের নাম নতুন ভোটের তালিকায় থাকার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।  ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন, 'প্রদীপের আগুন বিছানার চাদর থেকে গ্যাস সিলিন্ডারে ছড়িয়ে পড়ার জন্য নিশিন্দ্রা কলোনির ওই বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কিছু কাজের জন্য এই মুহূর্তে আমি কলকাতায় রয়েছি। ফরাক্কায় ফিরে গিয়ে ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করব। তাদের মাথায় দ্রুত একটি ছাদের ব্যবস্থা  আমি করে দেব।' জেলা প্রশাসন এবং বিধায়ক যেভাবে তৎপর হয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে আপ্লুত অপূর্ব বিশ্বাস। তিনি বলেন, 'অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাড়ির সমস্ত নথি পুড়ে যাওয়ায় আমরা আতঙ্কে ছিলাম।বিডিও এবং বিধায়ক যেভাবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন তাতে এখন আমাদের মধ্যে এসআইআর নিয়ে আর কোনও আতঙ্ক নেই।'
  • Link to this news (আজকাল)