বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: জুলাই বিক্ষোভে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এরপরেই নতুন করে অশান্ত বাংলাদেশ। লক ডাউন, বিক্ষোভ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিপর্যস্ত পড়শি দেশের স্বাভাবিক জনজীবন। এরপরেই উত্তরবঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। শুরু হয়েছে আরও কড়া নজরদারি। কার্যত নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত সংলগ্ন প্রতিটি জনপদ। থার্মাল ক্যামেরা, নাইটভিশন ক্যামেরা, সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চালানো হচ্ছে। সীমান্তে ভারতীয় অংশের চেকপোস্টে বসানো হচ্ছে বায়োমেট্রিক লক। এমনকী ‘চিকেনস নেকে’র সুরক্ষায় তৈরি ত্রিশক্তি কোর।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ এবং দক্ষিণ দিনাজপুর মিলিয়ে ছয় জেলায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। এরমধ্যে ১৯৫ কিলোমিটার সীমান্তে নদী, জমির সমস্যার জন্য কাঁটাতারের বেড়া নেই। আবার নদীর পারে কাঁটাতার ফেলা থাকলেও তাতে নিরাপত্তা পুরোপুরি সুনিশ্চিত হয় না। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরেই ওই এলাকায় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) টহল বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সীমান্ত রয়েছে কোচবিহার জেলায়। ৫৫০ কিলোমিটার। এরপর দক্ষিণ দিনাজপুর, ২৫০ কিলোমিটার। উত্তর দিনাজপুরে রয়েছে ২২৭ সীমান্ত। এই বিরাট সীমান্তের দুই দিনাজপুর এবং মালদহের অধীনে থাকা প্রায় ৭০০ কিলোমিটার এবং কোচবিহারের ৫৫০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত ‘চিকেনস নেক’ নামে পরিচিত ‘শিলিগুড়ি করিডোর’ রক্ষায় বাংলাদেশ সীমান্তের পাশে অসমের ধুবড়ি সংলগ্ন বামুনি, বিহারের কিশনগঞ্জ এবং উত্তরের চোপড়া এলাকায় তিনটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে ভারত। ওই ‘চিকেনস নেক’ ঘিরে রয়েছে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও চিন। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এলাকাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে এই এলাকায় সামরিক বাহিনীর তৎপরতা বেড়েছে। ‘চিকেনস নেকে’র নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে ভারতীয় সেনার ত্রিশক্তি কর্পস। মঙ্গলবার থেকে ওই ইউনিটের তৎপরতাও বেড়েছে বলে খবর।
আগেই হাসিমারা বিমানঘাঁটিতে মোতায়েন রাখা হয়েছে রাফাল যুদ্ধবিমান, বিভিন্ন মিগ ভ্যারিয়েন্ট ও ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র রেজিমেন্ট। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানেও বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সীমান্ত নজরে রেখে তিন দফায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরাট মহড়া শুরু হয়েছে ৬ নভেম্বর। সতর্ক করা হয়েছে ওই সীমান্ত লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সুখোই ৩০, রাফাল, জাগুয়ার সহ একাধিক যুদ্ধবিমান।
অন্যদিকে শিলিগুড়ি করিডোরে সুরক্ষা বাড়াতে নয়া পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাশাপাশি বিএসএফের তৎপরতা বেড়েছে। বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনে রয়েছে বালুরঘাটের হিলি সীমান্ত, জলপাইগুড়ির ফুলবাড়ি সীমান্ত, কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত, হলদিবাড়ি চিলাহাটি রেলপথ ও তিনিবিঘা করিডোর। সোমবার থেকে বিএসএফ-এর জলপাইগুড়ি সেক্টর, শিলিগুড়ি রাধাবাড়ি সেক্টর, রায়গঞ্জ সেক্টর ও কিষানগঞ্জ সেক্টর সেখানে কড়া নজরদারি শুরু করেছে বলে সীমান্তে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন কমেছে।