• নেই ভারতীয় নথিপত্র, বাংলাদেশ ফিরতে সীমান্তে ভিড় বাংলাদেশিদের
    এই সময় | ১৯ নভেম্বর ২০২৫
  • তপন মণ্ডল, স্বরূপনগর

    বছরের পর বছর ধরে কাজের খোঁজে অবৈধ ভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকে থেকে গিয়েছিলেন অসংখ্য বাংলাদেশি। তাদের বেশিরভাগই ভারতীয় নথিপত্র তৈরি করে নিলেও এখনও অনেক বাংলাদেশির হাতে নেই কোনও নথি। ভারতে থাকার জন্য আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবই কিছুই তৈরি হয়নি তাঁদের। অথচ বছরের পর বছর ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে তাঁরাও থাকছেন এ দেশে। সম্প্রতি সার নিয়ে শোরগোল শুরু হতেই অবৈধ ভাবে থাকা বাংলাদেশিরা দেশে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার ফলে ভিড় বাড়ছে সীমান্তে। ইতিমধ্যে স্বরূপনগরের হাকিমপুর চেকপোস্ট সংলগ্ন এলাকায় ভিড় বেড়েছে বাংলাদেশিদের। খোলা আকাশের নীচে ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে দেশে ফেরার অপেক্ষায় গাছের তলায় বসে আছেন বাংলাদেশি নাগরিকরা।

    মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, শতাধিক বাংলাদেশি গাছতলায় বসে আছেন। তাঁদের দাবি, 'সার শুরু হতেই আমরা যেখানে থাকতাম সেখান থেকে আমাদের দেশে ফেরার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। তাই আমরা সীমান্তে এসে বিএসএফের কাছে আত্মসমর্পণ করেছি।' ওই বাংলাদেশিদের দাবি, তাঁরা কোনও রাজ্যের সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পান না। অধিকাংশই কলকাতা, রাজ্যের অন্যান্য শহরতলিতে কেউ পরিচারিকার কাজ, ভ্যানরিকশা টানা বা রাজমিস্ত্রি, ইটভাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সার শুরু হওয়ায় তাঁদের কাছে কোনও নথি না থাকায় সকলেই নিজের দেশে ফিরতে মরিয়া। সাতক্ষীরা, যশোহর, ফরিদপুর, রাজশাহি, খুলনার বাসিন্দা এরা।

    গত কয়েকদিন ধরেই ভারত-বাংলাদেশ লাগোয়া স্বরূপনগর থানার হাকিমপুর চেকপোস্টের কাছে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিড় বাড়ছে। এ দিন সকালে হাকিমপুর চেকপোস্টের কাছে দেখা যায়, দলে দলে মানুষ বড় প্লাস্টিকের ব্যাগ, বস্তার ভিতরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে খোলা আকাশের নীচে অপেক্ষা করছেন। মহিলা পুরুষ মিলে সংখ্যাটা শতাধিক।

    তাদের মধ্যে সদ্যোজাত শিশুও আছে। শীতের রাতে ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছেন বলে এলাকার মানুষ ত্রিপল টাঙিয়ে দিয়েছেন। কেউ খিচুড়ি খাওয়াচ্ছেন।

    এ দিন দুপুরে হাকিমপুর সীমান্তে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল রীতা বিবির সঙ্গে। তিনি বলেন, 'বছর তিনেক আগে বাংলাদেশের রাজশাহি থেকে কাজের খোঁজে দালালের হাত ধরে মোটা টাকার বিনিময়ে ভারতে এসেছিলাম। হুগলির ডানকুনিতে স্বামী রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করত। দুটো বাচ্চাকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। এখন সার শুরু হতেই বাড়ির মালিক আমাদের রাখতে ভয় পাচ্ছে। কারণ আমাদের কাছে কোনও কাগজ নেই। বাধ্য হয়ে আমরা বিএসএফের কাছে সারেন্ডার করেছি।'

    বিষয়টি নিয়ে বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেন, 'আমরা আইনশৃঙ্খলার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছি। বাকিটা বিএসএফ দেখছে।' বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকা মেনেই বাংলাদেশি নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী কেউ বাংলাদেশে ফিরতে চাইলে আইনানুগ পথেই তাদের ফেরত পাঠানো হবে।

  • Link to this news (এই সময়)