গ্রেহাউন্ডের হানায় খতম মাওবাদীদের শেষ গেরিলা নেতা হিদমা
বর্তমান | ১৯ নভেম্বর ২০২৫
অমরাবতী: ডেডলাইন ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ। দেশকে মাওবাদীমুক্ত করার চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই সময়সীমা শেষের মাসকয়েক আগেই গ্রেহাউন্ড বাহিনীর এনকাউন্টারে খতম মাওবাদীদের শেষ গেরিলা শীর্ষ নেতা মাদভি হিদমা। মঙ্গলবার ভোররাতে অন্ধ্রপ্রদেশের আল্লুরি সীতারামারাজু জেলার মারেদুমিল্লির জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মারা গিয়েছেন হিদমার স্ত্রীর রাজে ওরফে রাজাক্কার সহ আরও পাঁচজন। মাওবাদীদের পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মির (পিএলজিএ) ১ নম্বর ব্যাটালিয়নের দায়িত্বে ছিলেন হিদমা। মাথার দাম ছিল ৫০ লক্ষ টাকা। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্যের নেতৃত্বে ২৬টি সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে মাওবাদীরা। এই তালিকায় অন্যতম ২০১০ সালে দান্তেওয়াড়ায় সিআরপিএফের উপর হামলা এবং ২০১৩ সালে ঝিরাম ঘাঁটিতে কংগ্রেস নেতা মহেন্দ্র কর্মার হত্যা।
ইতিমধ্যেই একের পর এক অভিযানে মাওবাদীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এনকাউন্টারে খতম করা হয়েছে সাধারণ সম্পাদক তথা সুপ্রিম কমান্ডার বাসবরাজু থেকে শুরু করে নর সিংহচলম ওরফে সুধাকর (গৌতম), গজরালা রবি, জয়রাম রামচন্দ্র রেড্ডি ওরফে চলপতি সহ একাধিক শীর্ষ মাওবাদী নেতাকে। ভুলস্বীকার করে আত্মসমর্পণের রাস্তায় হেঁটেছেন কিষেণজির ভাই মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাও। বর্তমানে মাওবাদীদের দুই পলিটব্যুরো নেতা জীবিত। প্রথমজন সদ্য সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া থিপ্পিরি তিরুপতি ওরফে দেবুজি। ৬৩ বছর বয়সি এই নেতা মাওবাদীদের সেন্ট্রাল রিজিওনাল ব্যুরোরও নেতৃত্বে। দ্বিতীয়জন ইস্টার্ন রিজিওনাল ব্যুরোর দায়িত্বে থাকা মিসির বেসরা ওরফে সাগর ওরফে সুনির্মল। তিনি আবার বেণুগোপালের অস্ত্রসংবরণ বা শান্তি আলোচনা তত্ত্বের ঘোর বিরোধী হিসেবে পরিচিত। প্রশাসন সূত্রে খবর, হিদমার মৃত্যুতে মাওবাদীদের গেরিলা বা সশস্ত্র বাহিনীতে আর কোনও বড়ো মাথা রইল না। কার্যত সাফ হওয়ার পথে মাওবাদী সাম্রাজ্য।
অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানা—তিন রাজ্যের সীমানা ছুঁয়ে রয়েছে আল্লুরি সীতারামারাজু জেলার মারেদুমিল্লি জঙ্গল। সূত্রের খবর, হিদমা যে সেখানেই লুকিয়ে, সেই খবর নিরাপত্তা বাহিনীকে দিয়েছিলেন বেণুগোপালই। শুধু তা-ই নয়, অক্টোবরে আত্মসমর্পণ করেছিলেন হিদমার ঘনিষ্ঠ ওয়াম লাখমু। জানা গিয়েছে, তাঁর কাছ থেকেও ‘ইনপুট’ পেয়ে এদিন গ্রেহাউন্ড বাহিনীর নেতৃত্বে অভিযানে নামে সিআরপিএফ। অন্ধ্রপ্রদেশের ডিজিপি হরিশকুমার গুপ্তা জানান, চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয় মাওবাদীদের ডেরা। দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলির লড়াই শুরু হয়। এর জেরেই প্রাণ যায় হিদমা, তাঁর স্ত্রী সহ ছ’জনের। ঘটনাস্থল থেকে দু’টি একে-৪৭, একটি পিস্তল ও একটি রিভলভার উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এনকাউন্টারের সময় বেশ কয়েকজন পালিয়ে গিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।