• ভয় দেখিয়ে ৩ কোটি টাকারও বেশি লোপাট, দুবাই পালানোর পথে গ্রেফতার সহপাঠী
    বর্তমান | ১৯ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দিল্লিতে ম্যানেজমেন্ট পড়তে গিয়ে অভিযোগকারী ছাত্রের সঙ্গে পরিচয়। কথা প্রসঙ্গে অভিযুক্ত জেনে নেয়, কলকাতার হরিদেবপুর এলাকার এম জি রোডের বাসিন্দা সহপাঠী যথেষ্ট বিত্তবান পরিবারের ছেলে। এরপর দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশের সীমানা লাগোয়া এলাকায় জমি দেবে বলে তাঁর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় ৬০ লক্ষ টাকা। এরপর বিদেশে বেড়াতেও নিয়ে যায়। ফিরে এসে  বিদেশের পুলিশের লোগো ও মেল আইডি জাল করে ওই ছাত্রের কাছে থ্রেট মেল পাঠায়। তাতে লেখা ছিল ধর্ষণ, পর্ণোগ্রাফি ও মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে। থ্রেট মেল পাঠিয়ে ওই ছাত্রের কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা  নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আক্রম আলি রিজভি নামে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। দুবাইতে পালানোর আগেই হায়দরাবাদ বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করে কলকাতায় নিয়ে এল লালবাজার।

    পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, হরিদেবপুরের বাসিন্দা ওই ছাত্রে ম্যানেজমেন্ট পড়তে দিল্লিতে যায়। সেখানেই পড়ত অভিযুক্ত আক্রাম। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতার কথা জেনে আক্রম তার  সহপাঠীকে বলে, দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশের সীমানায় থাকা বাইপাসে পৈতৃক সূত্রে তার কয়েকশো বিঘা জমি রয়েছে। তার কিছুটা অংশ বিক্রি করতে চায়। ওই ছাত্রকে কিনতে আগ্রহী হলে, তাঁর কাছ থেকে ২০২১-২২ সালে ৬০ লক্ষ টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। জমির জাল নথি তাঁকে দেওয়া হয়। ওই ছাত্রের বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার শখ আছে জানার পর আক্রাম জানায়, দুবাই, থাইল্যান্ডে তার নিয়মিত যাতায়াত ও যোগাযোগ রয়েছে।  ২০২২-২৩ সালে দুজনে মিলে দুবাই, থাইল্যান্ড ও মালেশিয়া বেড়াতে যায়। ফিরে আসার পর স্বমূর্তি ধারণ করে আক্রম। তদন্তে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত এই তিনটি দেশের পুলিশের জাল মেল আইডি ও লোগো তৈরি করে ওই ছাত্রের মেলে থ্রেট মেসেজ পাঠিয়ে বলে, তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, মাদক পাচার ও পর্ণগ্রাফি তৈরির অভিযোগ মামলা হয়েছে তিনটি দেশে। ভুয়ো গ্রেফতারি পরোয়ানাও পাঠায়। গ্রেফতারির হাত থেকে বাঁচতে  ওই মেলে দেওয়া অ্যাকাউন্ট নম্বরে টাকা পাঠাতে বলা হয়। ভয়ে ওই ছাত্র দাবি মতো আড়াই কোটি টাকা মেটান। তারপরেও থ্রেট মেল করে টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দিলে আরও মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন বুঝেই ওই ছাত্র ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হরিদেবপুর  থানায় অভিযোগ করেন।

    তদন্তে নেমে লালবাজার জানতে পারে, অভিযুক্ত বেশিরভাগই সময়ে দুবাইতে থাকছে। সেখানে তার ব্যবসা রয়েছে। এভাবেই ফাঁদে ফেলে ভয় দেখিয়ে টাকা হাতাচ্ছে। এই টাকাই বিদেশে লগ্নি রয়েছে। তার নামে লুক আউট নোটিশ জারি করা হয়। দেশে ফিরলেও তাকে ধরা যাচ্ছিল না। সোমবার সে হায়দরাবাদ বিমানবন্দর দিয়ে দুবাই পালানোর সময় ধরা পড়ে যায়। তাকে গ্রেফতার করে ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)