প্রীতেশ বসু, কলকাতা: নিজেদের বাড়ি রয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র বিয়ের রেজিস্ট্রি করতে হবে বলে বেপাড়ায় গিয়ে বাড়ি ভাড়া নিতে হচ্ছে হবু বর-কনেকে! কেন? কারণ, আইনি জটিলতায় রাজ্যের বহু জায়গায় ম্যারেজ রেজিস্ট্রার নিয়োগই হচ্ছে না। যে থানা এলাকায় রেজিস্ট্রার আছেন, সেখানে গিয়ে বাড়ি ভাড়া নিচ্ছেন হবু দম্পতি। তারপর সেই ঠিকানার ভিত্তিতে হলফনামা দিয়ে করছেন বিয়ের আবেদন। এই অচলাবস্থা আজকের নয়। চলছে বেশ কয়েক বছর ধরেই।
একজন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কোন থানা এলাকায় বিয়ের রেজিস্ট্রি করতে পারবেন, তা নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট। তার বাইরের কোনও এলাকার রেজিস্ট্রি করানোর ক্ষমতা নেই সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রারের। বর্তমানে রাজ্যের ১৩ জেলার ৩৩টি থানা এলাকায় কোনও ম্যারেজ রেজিস্ট্রার নেই। অথচ, সামনেই বিয়ের মরশুম। আগামী চার মাসে রেজিস্ট্রি হবে এমন আবেদন জমা পড়েছে ১৭ হাজার ৮৯৮টি। এই সংখ্যা আরও বাড়বে। দেখা যাচ্ছে, এঁদেরই অনেকে অস্থায়ী ঠিকানার এফিডেবিট দেখিয়ে বিয়ের আবেদন করেছেন। বাড়ির সম্মতিতে বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও। বর বা কনের বাড়ির নিকটবর্তী থানা এলাকায় যেখানে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার আছেন, তিন-চার মাসের জন্য সেখানেই উঠে যেতে হচ্ছে আবেদনকারীদের। তারপর রেজিস্ট্রির আবেদন। এর ফলে প্রাথমিকভাবে আইনগত কোনও সমস্যা হচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। পরবর্তীকালে বিয়ের রেজিস্ট্রির শংসাপত্র অনেক ক্ষেত্রে কাজে নাও আসতে পারে। কারণ শংসাপত্রে দেওয়া থাকবে বিয়ের সময়কালের সেই ‘অস্থায়ী ঠিকানা’। তার সঙ্গে মিল থাকবে না আধার কার্ড, ভোটার কার্ডের মতো পরিচয়পত্রে থাকা মূল ঠিকানার।
রাজ্যের আইন দপ্তরের অধীনে থাকা রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ম্যারেজেস’-এর অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া জেলা এই অচলাবস্থায় সবথেকে বেশি সমস্যায়। এখানকার এক ম্যারেজ রেজিস্ট্রার গত একবছরে ৪৫০টি রেজিস্ট্রি করেছেন। তার মধ্যে ৩৮০টিই হয়েছে ‘অস্থায়ী ঠিকানার’ ভরসায়। সাম্প্রতিককালে আবার কলকাতা সহ বেশ কিছু জেলায় থানা এলাকার পুনর্বিন্যাস হয়েছে। বড় থানা এলাকা ভেঙে ছোট করে নতুন থানা করা হয়েছে। অন্যদিকে, নিয়োগ বন্ধ থাকায় নতুন কিছু থানা এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আগের থানা এলাকার ম্যারেজ রেজিস্ট্রারকে। তারপরও পুরুলিয়ার আদ্রা, বান্দোয়ান, ঝালদা, জয়পুরের মতো আটটি পুরোনো থানা এলাকার সমস্যা কাটেনি। পাশাপাশি হাওড়া, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম, নদীয়া, দার্জিলিং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো জেলাও একই সমস্যায় জেরবার।
এই সুযোগে ম্যারেজ রেজিস্ট্রারদের একাংশ আবেদনকারীদের থেকে বাড়তি টাকাও হাঁকছেন। কলকাতার এক ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ১০০ টাকার জায়গায় ২০ হাজার নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ই-মেলে বিয়ের রেজিস্ট্রির শংসাপত্রের সঙ্গে একটি বার্তা পাঠিয়ে ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের আচরণ, সময়ে এসেছিলেন কি না ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চাইছে আইন দপ্তর। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রত্যেক রেজিস্ট্রারের রেটিং হচ্ছে। তা দেওয়া থাকছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের পোর্টালে।