প্যারোলে ছাড়া পেয়ে উধাও, ১১ খুনের আসামি লখনউয়ের গ্যাংস্টার ধৃত শহরে
বর্তমান | ১৯ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘প্যারোল জাম্প’! মাত্র তিন দিনের প্যারোলে তিহার জেল থেকে বেরিয়ে সাড়ে চার মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল লখনউয়ের কুখ্যাত গ্যাংস্টার মহম্মদ সোহরাব। পরিচয় ভাঁড়িয়ে অ্যাপ বাইক চালক সেজে গা-ঢাকা দেয় কলকাতায়। উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লি পুলিশের ঘুম ছুটিয়ে দেওয়া সেই গ্যাংস্টারকে ধরা পড়ল মঙ্গলবার। পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকার রিপন স্ট্রিট থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে উত্তরপ্রদেশ এসটিএফ এবং দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল। আজ, বুধবার আদালত থেকে ট্রানজিট রিমান্ড নিয়ে সোহরাবকে দিল্লিতে ফেরানো হবে। কমপক্ষে ১১টি খুন, ডাকাতি, অপহরণ ও তোলাবাজির অভিযোগ রয়েছে এই গ্যাংস্টারের বিরুদ্ধে।
কে এই সোহরাব? লখনউয়ের ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার সদর বাজারের বাসিন্দা। সোহরাবরা মোট চার ভাই। ২০০৪ সালে গ্যাংওয়ারের জেরে তাদের ছোট ভাই শাহাজাদা খুন হয়। পরের বছর ঈদের দিন ভাইয়ের খুনি সন্দেহে মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে তিনজনকে খুন করে সোহরাব ও তার দুই ভাই রুস্তম, সেলিম ও তাদের দলবল। আশ্চর্যের বিষয় হল, খুন করার দেড় ঘণ্টা আগে তৎকালীন লখনউ এসএসপি আশুতোষ পাণ্ডেকে ফোন করে সোহরাবের চ্যালেঞ্জ ছিল—‘পারলে আটকে দেখান!’ ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির করোলবাগে এক স্বর্ণবিপণিতে ডাকাতি করে সোহরাব গ্যাং। এক কোটি টাকার গয়না লুটের পর খুন করা হয় দোকান মালিককেও। ওই বছরের মে মাসে দুই ভাই সহ সোহরাবকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল। তিনজনকেই যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দেয় আদালত। তারপর থেকে তাদের ঠিকানা তিহার জেল। অসুস্থ স্ত্রী সান্নোকে দেখতে যাওয়ার আর্জি জানিয়ে চলতি বছরের জুন মাসে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল সোহরাব। গত ২৮ জুন তার তিনদিনের প্যারোল মঞ্জুর হয়। ১ জুলাই জেলে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে ‘প্যারোল জাম্প’ করায়, অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ে জেলে না ফেরায় কপালে ভাঁজ পড়ে তিহার কর্তৃপক্ষ ও দিল্লি পুলিশের। বিষয়টি জানানো হয় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এসটিএফকেও। খোঁজ শুরু হয় সোহরাবের। দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ পুলিশের টিম হানা দেয় উত্তরাখণ্ডের নৈনিতাল ও আলমোড়ায়। এই পর্বেই খবর আসে নেপালে গা-ঢাকা দিয়েছে ওই গ্যাংস্টার।
পুলিশ সূত্রে খবর, নেপাল থেকে বিহার হয়ে সোহরাব প্রথমে আসানসোলে এক পরিচিতের কাছে আসে। এরপর বর্ধমান শহরের এক পার্কিং লট থেকে একটি মোটর সাইকেল চুরি করে পাড়ি জমায় কলকাতায়। তপসিয়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে এসে ওঠে। তারপর আত্মীয়ের নথি ব্যবহার করে জাল পরিচয়পত্র বানিয়ে কাজ জুটিয়ে নেয় একটি অ্যাপ বাইক সংস্থায়। সোহরাবের স্ত্রীকে জেরা করে দু’টি মোবাইল নম্বর পেয়েছিল তদন্তকারীরা। তাতে আড়ি পেতেই জানা যায় কলকাতায় গ্যাংস্টারের লুকিয়ে থাকার বিষয়টি। এদিন সেভাবেই উত্তরপ্রদেশ এসটিএফ জানতে পারে, এক সওয়ারিকে ড্রপ করতে বিকেলে রিপন স্ট্রিটে আসছে সোহরাব। সেখানে আসামাত্রই পাকড়াও করা হয় তাকে।