• প্রাতর্ভ্রমণের মাঠ ফিরিয়ে দিতে পুরসভার কাছে কাতর আর্জি প্রবীণদের, দক্ষিণ দমদম পুরসভাকে চিঠি
    বর্তমান | ১৯ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: সর্বত্র কংক্রিটের জঙ্গল। রাস্তায় ধুলো ও গাড়ির দাপট। এই আবহে এলাকার পাঁচ-ছ’টি ওয়ার্ডের কয়েকশো বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কাছে দক্ষিণ দমদমের সুরের মাঠ ছিল কার্যত ফুসফুস। সেই মাঠে প্রাতর্ভ্রমণে এসে শরীরচর্চা, হাসি ও আড্ডায় মেতে উঠতেন প্রবীণরা। বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই মাঠের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে বছর খানেক আগে। ফলে পাশে রবীন্দ্রভবনের ভিতরের খোলা লনই বিকল্প হয়ে উঠেছিল তাঁদের কাছে। কিন্তু এক অদৃশ্য কারণে সেই রবীন্দ্রভবনের দরজাতেও তালা পড়েছে। অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের কেউ কেউ বাধ্য হয়ে হাঁটা বন্ধ করেছেন, কেউবা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় প্রাতর্ভ্রমণ শুরু করেছেন। সুরের মাঠ কিংবা রবীন্দ্রভবন চত্বরে আগের মতো হাঁটতে চেয়ে দক্ষিণ দমদম পুরসভার কাছে কাতর আবেদন জানিয়েছেন শহরের ২০০ জনেরও বেশি বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা। এ নিয়ে পুরসভার সিআইসি বৈঠকে আলোচনাও হয়েছে। 

    দক্ষিণ দমদম পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডে সুরের মাঠ ছিল স্থানীয়দের মুক্তাঞ্চল। এক সময় প্রাতর্ভ্রমণ, শীতের মেলা, খেলাধুলোয় জমজমাট থাকত এই মাঠ। পরে ওই জমিতে বেসরকারি কলেজের পাশাপাশি ক্রীড়াদপ্তরের উদ্যোগে ফুটবল স্টেডিয়াম, ইনডোর স্টেডিয়াম সহ নানা পরিকাঠামো তৈরি হয়। এসব তৈরির পরও প্রতিদিন সকালে প্রাতর্ভ্রমণের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছিল। যাঁরা নিয়মিত আসেন, তাঁদের পরিচয়পত্রও দেওয়া হয়েছিল। গত বছর থেকে সুরের মাঠে সমস্ত ধরনের প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। পাশে পুরসভা পরিচালিত রবীন্দ্রভবন চত্বরে বড় জায়গা রয়েছে। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রবীণরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে শরীর চর্চা করতে আসতেন এখানে। হাঁটার পাশাপাশি লাফিং ক্লাবও চলত। কয়েক মাস হল তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।  সম্প্রতি, শহরের ১০, ১২, ১৯, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ২১২ জন বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা পুরসভার চেয়ারম্যান কস্তুরী চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁরা সুরের মাঠে প্রাতর্ভ্রমণের কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের অনুরোধ, সুরের মাঠে যদি হাঁটার ব্যবস্থা না হয়, তাহলে অন্তত রবীন্দ্রভবনের গেট খোলা রাখা হোক। ওই চিঠির কপি পুরসভার সব কাউন্সিলারকে দেওয়া হয়েছে। প্রাতর্ভ্রমণকারী দেবাশিস দত্ত ও চিন্ময় রায় বলেন, আমরা শরীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। অনেকেই সকালে হাঁটা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। আগের মতো সকলের সঙ্গে আর দেখা হয় না। শরীর চর্চা, সকলের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, হাসি-ঠাট্টা, ভালো মন্দের খবর নেওয়া সবই বন্ধের পথে। আগের মতো যাতে প্রাতর্ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়, তার জন্য আমরা বয়স্করা পুরসভাকে চিঠি দিয়েছি। পুরসভার সিআইসি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার পর ঠিক হয়েছে, সিআইসি (স্বাস্থ্য) সঞ্জয় দাস স্থানীয় কাউন্সিলারের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ করবেন। সঞ্জয়বাবু বলেন, সুরের মাঠে খেলা, মেলা, প্রাতর্ভ্রমণ সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। তবে যাতে সকালের দিকে রবীন্দ্রভবন প্রাঙ্গণে ঢোকার দরজা অন্তত দু’ঘণ্টা খোলা রাখা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। আশা করি, দ্রুত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)