• সুপ্রিম কোর্ট নিজের রায় ফেরানোয় কি বাড়ল পরিবেশ ধ্বংসের আশঙ্কা?
    এই সময় | ১৯ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: পরিবেশ সংক্রান্ত একটি মামলায় নিজেদের রায় বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট। গত ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়ে জানিয়েছিল কোনও উন্নয়নমূলক প্রকল্প তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে কেন্দ্র চাইলেও পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দিতে পারবে না। সেই রায়ের ফলে পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়নের বিশাল বিশাল প্রকল্প তৈরির উপরে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ সেই রায় বাতিল করে দেওয়ায় পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ল। তিন বিচারপতির বেঞ্চ অবশ্য এই রায়ে সহমত হতে পারেনি। বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়া তাঁর ‘ডিসেন্ট নোট’–এ জানিয়েছেন, আগের রায় বাতিল করা ‘বেআইনি’ ও ‘অভিশপ্ত’।

    ১৬ মে–র ওই রায়ের পরে পরিবেশ নষ্ট করে তৈরি হওয়া বহু সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্প ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ফের আদালতের দ্বারস্থ হয় বিল্ডার অ্যাসোসিয়েশনগুলি। মঙ্গলবার ওই মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রন ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি চন্দ্রন আগের রায় বাতিলের পক্ষে সম্মতি দিয়ে জানান, ওই রায়ের ফলে বহু সরকারি প্রকল্পের নির্মাণ ভাঙার জন্য খরচ হবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। যা বাস্তবসম্মত নয়। পরিবেশ রক্ষা করার পরিবর্তে তা পরিবেশকে আরও বিপন্নই করে তুলবে। বিচারপতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতে এই রায়ই কার্যকর হয়। গত মে মাসে বিচারপতি ওকা ও ভুঁইয়ার দুই সদস্যের বেঞ্চ ‘বিচারবিভাগীয় শৃঙ্খলা’ অনুযায়ী মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠাতে পারত বলেও মন্তব্য করেছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।

    তবে এই রায়ে তীব্র আপত্তি জানান বিচারপতি ভুঁইয়া। তাঁর কথায়, ‘প্রকল্প তৈরি হওয়ার পর পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়ার ভাবনাটাই অর্থহীন। এই ধরনের ছাড়পত্র বেআইনি, তা পরিবেশের স্থিতাবস্থার জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক। এই সিদ্ধান্ত কার্যত পরিবেশের জন্য অভিশাপ।’ গত মে মাসের ওই রায়ে কেন্দ্রকে বেআইনি ভাবে প্রকল্প তৈরির পর পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এ দিনের রায়ের পর কেন্দ্র সেই অধিকার ফিরে পাওয়ায় বেআইনি ভাবে পরিবেশ নষ্ট করে প্রকল্প তৈরির প্রবণতা বাড়বে বলে আশঙ্কা বাড়ছে পরিবেশবিদদের।

    ‘বনশক্তি’ নির্দেশ নামের মে মাসের ওই রায়ের ফলে পরিবেশকে রক্ষা করার ব্যাপারে কেন্দ্রকে অনেক কঠোর শৃঙ্খলে বেঁধে ফেলেছিল শীর্ষ আদালত। কিন্তু সেই রায়ের বিরোধিতা করে প্রায় ৪০টি রিভিউ পিটিশন জমা পড়ে। সেই প্রতিটি পিটিশন একত্র করে এ দিন আলাদা তিনটি রায় দেন তিন বিচারপতি। মে মাসের ওই রায়ে বন, পরিবেশ ও আবহাওয়া পরিবর্তন মন্ত্রকের উপরে এই ধরনের ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সেই রায় বাতিল হওয়ায় পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার পথ খুলে দেওয়া হলো বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী জয়রাম রমেশ।

  • Link to this news (এই সময়)