• ঝকঝকে রিলের লোভে জীবন বাজি! জয়ী সেতুতে দিনভর বাইকে স্টান্ট নেটিজেনদের
    প্রতিদিন | ১৯ নভেম্বর ২০২৫
  • বিক্রম রায়, কোচবিহার: ট্রাফিক বিধি মেনে গাড়ি চালানো তো দূরে কথা, বাইক চালাতে চালাতেই হঠাৎ সামনের চাকা উপরে তুলে চলছে স্টান্টবাজি। কখনও বা আবার দ্রুত গতিতে বাইক চালানোর সময় দু্’হাতই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কেউ বা আবার চলন্ত বাইকে শুয়ে পড়েছেন। এভাবেই অনেকটা পথ অতিক্রমও হয়ে যাচ্ছেন!

    কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমার জয়ী সেতু ও সংলগ্ন এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক শ্রেণির যুবকদের মধ্যে এভাবেই ‘রিল’ বানানোর প্রবণতা বাড়ছে। রাজ্যের দীর্ঘতম এই জয়ী সেতু তো বটেই ওইসব যুবকদের একাংশ শহরের বিভিন্ন মোড় এবং অলিগুলিকেও ‘রিল’ বানানোর লোকেশন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ওইসব বাইক চালকদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুপুর এবং বিকেলের দিকে এইসব বাইক চালক যুবকেরা মেতে উঠছেন সামাজিক মাধ‌্যমের জন‌্য ‘রিল’বানানোর নেশায়। যা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন এই রাস্তায় চলাচলকারী স্থানীয় মানুষজন।

    তাঁদের কথায়, যেভাবে বাইক নিয়ে এসে স্টান্টে মাতছেন ওইসব যুবক। তাতে প্রতি মুহূর্তে মারাত্মক বিপদের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। কারণ, প্রায়ই দেখা যায় এসব যুবক প্রতিযোগিতায় নামতে গিয়ে জীবণ বাজি রেখে এসব কাজকর্ম করছেন। তৈরি হবার পর থেকেই রাজ্যের দীর্ঘতম এই জয়ী সেতু দেখতে স্থানীয়রা তো বটেই, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকেও প্রচুর মানুষজন নিয়মিত আসেন। তবে সকাল এবং বিকেলের দিকে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের ভিড় বাড়ে। এই সেতু চালুর ফলে মেখলিগঞ্জ মহকুমার দুটি ব্লক হলদিবাড়ি এবং মেখলিগঞ্জ ব্লকের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ অনেকটাই সহজ হয়েছে। যার কারণে জয়ী সেতুতে মানুষের আনাগোনা সব সময় লেগে রয়েছে। তার উপর সেতু ঘুরে দেখতে আসছেন বিভিন্ন মানুষজন। তাদের সামনেই ওইসব যুবকদের জীবন বাজি রেখে রিল বানানোর নেশায় মগ্ন থাকতে দেখা যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে এইসব এলাকাতে বাইক-সহ ছোটখাটো পথ দুর্ঘটনাও ঘটছে। এই অবস্থায় ওইসব যুবকদের বেপরোয়া বাইক চালানোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের তরফে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করা হয়েছে।

    জানা গিয়েছে, স্থানীয়দের তরফে বিপদের ঝুঁকি থাকা ওইসব ‘রিল’ বানানো নিয়ে প্রতিবাদ করা হলেও ওইসব যুবকেরা কর্ণপাত করেন না। উল্টে প্রতিবাদকারীদের তারাই হুমকি দিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন। এই পথে নিয়মিত চলাচলকারী আবদুল রশিদ বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ জয়ী সেতুতে এক শ্রেণির যুবক বাইক চালিয়ে যেভাবে ঝুঁকি নিয়ে রিলস বানাচ্ছেন। ভিডিও বানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন। এতে যে কোনও সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো দরকার।” বাসকর্মী রতন রায়ের বক্তব্য, ‘‘ইদানিং বিপদের ঝুঁকি নিয়ে যুবকদের একটা বড় অংশ বাইক চালাতে চালাতে ভিডিও বানাচ্ছেন। এমনকি ভিডিও বানানোর জন্য কেউ কেউ বাইক নিয়ে রাস্তার উপর শুয়েও পড়ছেন এসব বন্ধ হওয়া দরকার।’’

    জানা গিয়েছে বিষয়টির কথা ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে প্রশাসনিক স্তরেও। মেখলিগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান প্রভাত পাটনি বলেন, “এই ধরনের একটা অভিযোগ বেশ কিছুদিন ধরে কানে আসছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে পদক্ষেপ করার অনুরোধ জানানো হবে। পুলিশের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে জয়ীসেতু সংলগ্ন এলাকাতেও বেআইনি বাইক চালকদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। ট্রাফিক আইন মেনে চলতে বলা হচ্ছে। এরপরেও কেউ নিয়মভঙ্গ করলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ মেখলিগঞ্জ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক আশিস পি জানিয়েছেন, পুলিশের তরফে এনিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)