• স্ত্রী-পুত্রের বয়সের ফারাক পাঁচ বছর! নথি নিয়ে ছোটাছুটিই সার, ‘এসআইআর-আতঙ্কে’ এ বার আত্মঘাতী বাদুড়িয়ার প্রৌঢ়
    আনন্দবাজার | ১৯ নভেম্বর ২০২৫
  • এ বার ‘এসআইআর-আতঙ্কে’ আত্মহত্যার ঘটনা উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায়। মৃতের পুত্রের দাবি, সরকারি নথিতে ভুল থাকায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন ৫৭ বছরের শফিকুল মণ্ডল। এসআইআর হলে দেশ ছাড়তে হবে, এই ভয়ে গত কয়েক দিন ধরে কিছু মুখেই তোলেননি প্রৌঢ়। তার পরেই নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন তিনি। বুধবার প্রৌঢ়ের মৃত্যুতে শোরগোল বাদুড়িয়ার যদুরহাটি এলাকায়। আত্মহত্যার ঘটনায় বিজেপিকে দুষছে তৃণমূল। পাল্টা শাসকদলকে বিঁধেছে বিরোধীরা।

    শফিকুলের পরিবারের দাবি, কয়েক পুরুষ ধরে তারা বাদুড়িয়া তথা বাংলার বাসিন্দা। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে শফিকুল দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর পরিচয়পত্রে যে বয়স দেওয়া হয়েছে, তার ব্যবধান প্রথম পক্ষের সন্তানদের সঙ্গে কম। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কী ভাবে ওই নথি ঠিক করবেন বা ভুল সংশোধন করবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন স্বল্পশিক্ষিত মানুষটি। ছেলের দাবি, গত ১৫ দিন ধরে নানা জায়গায় ছোটাছুটি করেছেন বাবা। কিন্তু কাজ হয়নি। ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন শফিকুল। এর পর গত কয়েক দিন নাওয়া-খাওয়া ভুলে যান প্রৌঢ়। পুত্র রুহুল আমিন মণ্ডলের কথায়, ‘‘গত পাঁচ-ছ’দিন খাওয়া-দাওয়া করেনি বাবা। অনেকেই বাবাকে বলে এ বার ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’-এ যেতে হবে। তার পর থেকেই উনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। আমরা বুঝিয়েও পারিনি।’’

    তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার তাঁদের নজর এড়িয়ে বাড়ির অদূরে একটি নির্জন জায়গায় গিয়ে বিষ খান শফিকুল। স্থানীয়দের নজরে পড়ার পর তাঁকে উদ্ধার করে বাদুড়িয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

    বুধবার মৃতের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বসিরহাট মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে মৃতের পুত্র বলেন, ‘‘আমাদের কাগজপত্রে (নথি) সমস্যা নেই। আসলে বাবার দুটো বিয়ে। আমাদের মায়ের নামে ডকুমেন্টস দিয়ে বিভিন্ন কাজ করেছি এত দিন। কিন্তু এসআইআর ঘোষণার পরে গত ১৫ দিন ধরে দৌড়াদৌড়ি করছিল বাবা। আমাদের সঙ্গে মায়ের বয়সের ফারাক হয় ৫-৭ বছরের। অনেকে ভয় দেখান। সেই আতঙ্কে উনি নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন।’’

    মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। তাঁদের উদ্দেশে রুহুল বলেন, ‘‘আমার বাবাকে তো আর পাব না। কিন্তু আর কারও সঙ্গে যেন এমন না হয়। তাই আপনারা চাইলে বাবার দেহ সামনে রেখে বিক্ষোভ-আন্দোলন করতে পারেন।’’ শাসকদলের নেতাদের অভিযোগ, ‘‘এ ভাবে ভয় এবং আতঙ্কের আবহ তৈরি করেছে বিজেপি। এতগুলো মৃত্যুর দায় তাদের।’’ অন্য দিকে, তৃণমূলের বিরুদ্ধেই এসআইআর নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ করেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)