ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) জেরে আতঙ্কে ফের মৃত্যুর অভিযোগ তুলল তৃণমূল কংগ্রেস। ঘটনাস্থল, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী। পরিবার আতঙ্কের অভিযোগ মানেনি। এই আবহে অতীতের নানা ঘটনার বলে বিভিন্ন মৃত্যুর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল অবশ্য ‘এসআইআর-চাপে’র অভিযোগে অনড় রয়েছে।
বাসন্তীর শিবগঞ্জের বাসিন্দা জয় সিংহ (৫৬) নামে এক ব্যক্তি সোমবার সন্ধ্যায় আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে জানানো হয়। রাতেই এই মৃত্যুর জন্য এসআইআর-আতঙ্ককে দায়ী করে সরব হয়েছিলেন বাসন্তীর তৃণমূল বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল। যদিও পরিবারের দাবি, আতঙ্ক ছিল না। মৃতের আত্মীয় স্বপন ঢালি জানিয়েছেন, জয়-সহ বাড়ির সবার নাম ২০০২-এর ভোটার তালিকায় রয়েছে।বিধায়কও পরে বলেন, “এসআইআর-আতঙ্কে মৃত্যু বলে খবর পেয়েছিলাম। কী কারণে মৃত্যু, পুলিশ দেখুক।”
এই আবহে মঙ্গলবার বীরভূমের কীর্ণাহারে দলীয় কর্মসূচি থেকে শুভেন্দুর পাল্টা বক্তব্য, “বিষ-মদে যাঁরা মৃত, যোগ্য শিক্ষক যাঁরা মারা গিয়েছেন, যত শ্রমিক আত্মঘাতী, সে জন্য দায়ী মমতা।” এর সঙ্গেই বিরোধী নেতা আবার দাবি করেছেন, এসআইআর-আবহে কয়েক লক্ষ লোক বাংলাদেশে পালিয়েছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যেরও অভিযোগ, “আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, ‘ডিটেক্ট, ডিলিট, ডিপোর্ট’। নানা জায়গায় অনেকে ভয়ে বাংলাদেশে চলে যাচ্ছেন। এঁদের জন্য বিভিন্ন নথি তৈরি করেছিল তৃণমূল।”
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, “নাগরিকদের অনেকে মানসিক চাপে আত্মহত্যা করছেন। বুথ লেভেল অফিসারেরা (বিএলও) হুমকির মুখে রয়েছেন।” বিধাননগরের একটি ‘দৃষ্টান্তে’র কথা উল্লেখ করে কমিশনের কাছে বিজেপি পাল্টা অভিযোগ করেছে, নানা জায়গায় বিএলও-রা তৃণমূলের শিবির থেকে গণনা-পত্র বিলি ও সংগ্রহের কাজ করছেন। দলের বিএলএ ২-দেরআটকে রাখার অভিযোগও তুলেছে বিজেপি। রাসবিহারীতে ‘রাজনৈতিক প্রভাবে’ ১৬৮ নম্বর পার্টের বিএলও মিষ্টির দোকানে বসে এসআইআর-কাজ করছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। রিজেন্ট পার্কে এসআইআর আতঙ্কে যমুনা মণ্ডল নামে এক বৃদ্ধার অপমৃত্যুর অভিযোগতুলেছিল পরিবার। কংগ্রেসের আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়েরা এ দিন ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন।
বিএলও-দের পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপি, তৃণমূল ও নির্বাচন কমিশনকে বিঁধেছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম কৃষ্ণনগরে বলেছেন, ‘‘বিএলও-দের নিয়ে টানাটানি করছে বিজেপি-তৃণমূল। সিইও রোজ নতুন নির্দেশ দিচ্ছেন। সাহস থাকলে কমিশন সব ভুয়ো ভোটারের নাম বাদ দিক। আর মৃতের তালিকা কবরস্থানে, শ্মশানে পাওয়া যায়। জ্যান্ত মানুষকে এত সময় ধরে খুঁজতে হবে কেন?” এই আবহে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের কটাক্ষ, “এসআইআর-কে রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। কেন এত তাড়াহুড়ো? জ্ঞানেশ কুমার এখন বিজেপি-র সভাপতি!”