বিধায়ক-পদ খারিজ হওয়ায় মুকুল রায়ের চিকিৎসার খরচ নিয়ে ধন্দে পড়েছে বিধানসভা। হাই কোর্টের আদেশের পরে গুরুতর অসুস্থ নেতার চিকিৎসার খরচ বহন করা যাবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে বিধানসভার সচিবালয়। নেওয়া হচ্ছে আইনি পরামর্শ।
দলত্যাগ-বিরোধী আইনে আদালতের নির্দেশে বিধায়ক-পদ খারিজ হওয়ায় নতুন সঙ্কট তৈরি হয়েছে মুকুলকে নিয়ে। এই মুহূর্তে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মুকুলের চিকিৎসায় বড় অঙ্কের খরচ হচ্ছে। বিধায়ক-পদ খারিজ হয়ে যাওয়ায় মুকুলে চিকিৎসার খরচ নিয়ে চিন্তায় বিধানসভার সচিবালয়। প্রাথমিক ভাবে হাই কোর্টের রায় পর্যালোচনা করে বিধানসভার আধিকারিকেরা মনে করছেন, আগের মতো এই খরচ বিধানসভার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। কারণ, ওই নির্দেশের ফলে মুকুল আর বিধায়ক নন। তাই পদাধিকার বলে সরকারি সুবিধাও তাঁর প্রাপ্য নয়। ফলে, বিধায়কদের চিকিৎসা বাবদ বিধানসভার যে আর্থিক দায়িত্ব থাকে, এ ক্ষেত্রে তা কার্যকর হচ্ছে না।
হাই কোর্টের আদেশের পরে মুকুলের বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ মহলেও আলোচনা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি অসুস্থ মুকুলের চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচের কথাও তাঁদের গোচরে এসেছে। দলীয় সূত্রে খবর, কলকাতার যে হাসপাতালে মুকুলের চিকিৎসা চলছে, সেখানে কয়েক দফায় বেশ কয়েক লক্ষ টাকা দিয়েছে বিধানসভা। তার পরে সেখানে বড় অঙ্কের ‘বিল’ বকেয়া রয়েছে। এই অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে বিধানসভার সচিবালয় আইনি পরামর্শ নিচ্ছে। হাই কোর্ট যে আদেশ দিয়েছে, তা কোন সময় থেকে কার্যকর, তা-ও বুঝে নিতে চাইছেন আধিকারিকেরা।
একই সঙ্গে মুকুলের বিধায়ক-পদ খারিজের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ফেরআদালতে যাওয়ার বিষয়টিও শাসক শিবিরের বিবেচনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে বিধানসভা, তৃণমূল বা মুকুলের নিজের তরফে। তবে তৃণমূল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। দলবদলের কারণে মুকুলের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে তৃণমূলের এই আবেদন আইনের চোখে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দলের এক নেতার কথায়, “এই ধরনের বিষয় সর্বোচ্চ স্তরে চূড়ান্ত হয়। সে ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ।”
ব্যক্তিগত স্তরে মুকুলের তরফেও আইনি লড়াই করা যেতে পারে। কিন্তু তিনি শারীরিক অবস্থা-সহ অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আছেন। আইনি লড়াই শুরু হলে বিধায়ক হিসেবে তাঁর সদস্যপদের আইনি স্বীকৃতি ফিরবে কি না, তা নিয়েও চর্চা চলছে। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “যা হওয়ার, তা আইন মেনেই হবে।”