বিগত ১৫ দিনে এ রাজ্যে এএসআইআরের (ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন) অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তবে মঙ্গলবার কমিশন-প্রতিনিধিদের নেওয়া বৈঠকে তথ্যের স্বচ্ছতা নিয়ে ফের একবার সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে জেলা-কর্তাদের। একই সঙ্গে বলে দেওয়া হয়েছে, স্বচ্ছতা বজায় রাখার দায় থেকে যাচ্ছে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) কার্যালয়ের উপরেও। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে তথ্যই দেওয়া হোক, তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য থাকবে প্রযুক্তির (ফ্যাক্ট-চেক) সহায়তা। ফলে ভুল তথ্য ধরে ফেলা যাবে অনায়াসে। সে ক্ষেত্রে এসআইআরের সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ধারার প্রয়োগে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের পথ খোলা রয়েছে কমিশনের সামনে। বাদ যাবে না সিইও কার্যালয়ও।
এ দিন জোড়া বৈঠক দিয়ে রাজ্য সফর শুরু করেছেন পশ্চিমবঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র উপ-নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী, উপ নির্বাচন কমিশনার অভিনব আগরওয়াল, কমিশনের প্রধান সচিব এস বি জোশী এবং মলয় মল্লিক। সিইও মনোজ আগরওয়ালকে সঙ্গে রেখে তাঁরা বৈঠক করেন কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণের জেলা নির্বাচনী আধিকারিক, ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার আধিকারিকদের সঙ্গে। খতিয়ে দেখা হয় এসআইআরের কাজ। জানতে চাওয়া হয় সমস্যার কথাও। পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের সঙ্গেও কিছুক্ষণ আলাদা কথা হয় কমিশনের। আধিকারিকদের একাংশ মনে করাচ্ছেন, একাধিক অভিযোগ পাওয়ার কারণে কয়েক দিন আগেই ওই জেলাকে সতর্ক করা হয়েছিল।
২০০২ সালের এসআইআর-তথ্য রয়েছে কমিশনের হাতে। ফলে সেই তালিকার সঙ্গে এখনকার ভোটারদের মিল থাকার তথ্য এমনিতেই রয়েছে। প্রশ্ন রয়েছে মৃত, একাধিক ঠিকানায় নাম থাকা, স্থায়ী ভাবে স্থানান্তরিত এবং ভুয়ো-ভূতুড়ে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে। মৃত ভোটারদের তথ্য বিভিন্ন সূত্রে আসছে কমিশনের কাছে। আবার একাধিক ঠিকানায় নাম থাকা ভোটারদের ক্ষেত্রে তথ্য যাচাইয়ের প্রযুক্তি কাজে লাগবে। ছবির সঙ্গে প্রকৃত ভোটারকে মেলানোর প্রশ্নেও এই প্রযুক্তি কার্যকর। তা ছাড়া সাধারণ নাগরিক বা রাজনৈতিক দলগুলিও এমন ভোটারদের চিহ্নিত করে দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে যাঁদের হাত ধরে সংশ্লিষ্টরা ভোটার তালিকায় জায়গা পেয়েছেন, তা বুঝে নিয়ে পদক্ষেপ করবে কমিশন। ভোটারদের বা তাঁদের নিকটাত্মীয়দের কেউ অসত্য তথ্য দাখিল করলে তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এনুমারেশন ফর্মে উল্লেখ রয়েছে সে কথা। যেখানে সই করছেন ভোটার বা তাঁর নিকটাত্মীয়।
সোমবার স্বচ্ছতার প্রশ্নে এই সতর্কবার্তা ১২টি রাজ্যের সিইও-কে দিয়েছিলেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। সূত্রের দাবি, এ দিন সেই প্রতিধ্বনি ছিল কমিশনের বাকি কর্তাদের গলাতেও।
কমিশন জানিয়েছে, চলতি এসআইআর-এ এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত বিলি হয়ে গিয়েছে ৯৯.৬৬% ফর্ম (সংখ্যার হিসাবে তা প্রায় ৭.৬৩ কোটি)। একই সঙ্গে মঙ্গলবার পর্যন্ত পূরণ হয়ে ফেরত আসা প্রায় ১.০৯ কোটি (১৪.২৪%) ফর্ম ডিজিটাইজ় করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এ রাজ্যে মোট ভোটার সংখ্যা ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫২৯। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১২টি রাজ্য মিলিয়ে ফর্ম বিলির সংখ্যা এ দিন পর্যন্ত হয়েছে প্রায় ৯৮.৫৪% এবং ডিজিটাইজ় করা হয়েছে ১১.৭৬% ফর্ম। এই ১২টি রাজ্যের মোট ভোটার সংখ্যা ৫০ কোটি ৯৭ লক্ষ ৪৪হাজার ৪২৩।
প্রসঙ্গত, বিলি হওয়া ফর্মের মধ্যে মৃত এবং স্থানান্তরিত ভোটারেরাও রয়েছেন। কমিশনের ব্যাখ্যা—মৃত ভোটারদের ক্ষেত্রে ফর্মের কোথাও তথ্য পূরণ না করে ফাঁকা জায়গায় ‘মৃত ভোটার’ কথাটি লিখে সই করতে হবে পরিবারের সদস্যকে। মৃত্যুর শংসাপত্র-সহ সেই ফর্ম গ্রহণ করে তা মৃত ভোটারের তালিকায় নথিভুক্ত করবেন বিএলও। একাধিক ঠিকানায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের কাছে সংশ্লিষ্ট ফর্মগুলি পৌঁছলে পছন্দের ঠিকানাটি বেছে অপর ঠিকানার জন্য নির্দিষ্ট ফর্মে ‘স্থানান্তরিত’ কথাটি লিখে দিতে হবে ভোটার বা তাঁর নিকটাত্মীয়কে।
এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বৈঠক শেষ করেই নদিয়া রওনা হন কমিশন-কর্তারা। আজ, বুধবার কৃষ্ণনগরে বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁদের।