• বাংলাদেশি সন্দেহে ওড়িশায় ‘আটক’ বাংলার ১৭ ফেরিওয়ালা
    আজকাল | ১৯ নভেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুর্শিদাবাদ এবং মেদিনীপুর জেলা থেকে ফেরিওয়ালার কাজ করতে গিয়ে গত তিন দিন ধরে ওড়িশা পুলিশের হাতে আটক হয়ে রয়েছেন এই রাজ্যের কমপক্ষে ১৭ জন বাসিন্দা। আটক পরিযায়ী ফেরিওয়ালাদের অভিযোগ, তাঁরা একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ার কারণে বাংলাদেশি সন্দেহে ওড়িশা সরকার এবং সেখানকার পুলিশ তাঁদেরকে অবৈধভাবে আটক করে রেখে দিয়েছে। ওড়িশা পুলিশের হাতে আটক হয়ে থাকা এই রাজ্যের ফেরিওয়ালারা নিজেদের ভারতীয় হওয়ার বৈধ নথিপত্র ওড়িশা পুলিশকে দেখালেও, সেগুলিকে তারা মান্যতা দিতে রাজি নয় বলে জানিয়েছেন বন্দি হয়ে থাকা এই রাজ্যের বাসিন্দারা। 

    সূত্রের খবর, বর্তমানে ওড়িশা পুলিশের হাতে যে ১৭ জন ফেরিওয়ালা বন্দি হয়ে রয়েছেন তাঁদের মধ্যে ১০ জন মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি এবং সামশেরগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা এবং বাকি সাত জন মেদিনীপুর জেলার বাসিন্দা। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, ওড়িশা পুলিশের হাতে ফেরিওয়ালাদের আটক হওয়ার খবর তাঁরা ইতিমধ্যেই পেয়েছেন। ওই সমস্ত ব্যক্তির বৈধ নথিপত্র খতিয়ে দেখার কাজও শেষ হয়েছে। সেগুলি ইতিমধ্যেই ওড়িশা পুলিশকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার তরফে। 

    প্রসঙ্গত, এর আগেও একাধিকবার মুর্শিদাবাদ জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে ওড়িশায় মারধর এবং তাঁদের বন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে সেখানকার বিজেপি সরকার এবং স্থানীয় কিছু বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনা তৃণমূল নেতৃত্ব সরব হওয়ার পর কিছুদিনের জন্য বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর ওড়িশায় অত্যাচার কমেছিল। নতুন করে ওড়িশায় ফের একবার পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মানুষদের হেনস্থা করা শুরু হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে সেখানে কর্মরত প্রচুর বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে।  সূত্রের খবর, অক্টোবর মাসের ২৪ তারিখে মুর্শিদাবাদ জেলার মহিষাসস্থলী গ্রাম থেকে সাতজন, শঙ্করপুর থেকে একজন, ভাষাই পাইকর থেকে একজন এবং বাহাগলপুর থেকে একজন ফেরিওয়ালার কাজ করার জন্য ওড়িশার ভদ্রক জেলায় গিয়েছিলেন। ওই ফেরিওয়ালারা সেখানকার শারকার নগর নামে একটি এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন এবং সেখান থেকে রোজ সকালে কাজে বেরিয়ে যেতেন। 

    ওড়িশা পুলিশের হাতে বন্দি কাবিরুল শেখ নামে মহিষাস্থলী গ্রামের এক ফেরিওয়ালা আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে গিয়ে জানান, “বেশ কয়েক বছর ধরেই আমরা নিয়মিত ওড়িশায় ফেরিওয়ালার কাজ করতে যাই। আগে কখনই ওড়িশায় কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়নি। সম্প্রতি ওড়িশায় সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই আমাদের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।” তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে আমরা যে দশ জন ব্যক্তি ফেরিওয়ালার কাজ করতে এসেছিলাম তাদের মধ্যে পাঁচজন বাচ্চাদের পোশাক বিক্রি করতাম এবং বাকি পাঁচজন বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বিক্রি করতাম।”

    তাঁর কথায়, “আমরা ১৭ জন ফেরিওয়ালা একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতাম। গত তিন দিন আগে রাত ৯টা নাগাদ বেশ কিছু পুলিশ আমাদের ঘরে এসে আমাদের ধরে নিয়ে চলে আসে।” ওড়িশা পুলিশের হাতে আটক মুর্শিদাবাদের ফেরিওয়ালারা দাবি করেছেন, মূলত বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে পরিচয়ের জন্য তাঁদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁদের আরও অভিযোগ, গত তিনদিন ধরে ওড়িশা পুলিশ তাদেরকে একটি বাড়ির মধ্যে আটকে রেখেছে। তাঁদের কাউকে ঠিকমত খেতে দেওয়া হচ্ছে না। 

    আটক ওই ফেওয়ালারা আরও জানিয়েছেন, ওড়িশা পুলিশ তাঁদের মারধর না করলেও তাদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। ওড়িশা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পরেই তাঁরা নিজেদের ভারতীয় হওয়ার যাবতীয় নথিপত্র যেমন- প্যান কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড সবই দেখিয়েছেন। কিন্তু ওড়িশা পুলিশ সেগুলি দেখে তাদের মুক্তি দিতে রাজি হয়নি। 

    কাবিরুল জানান, “আমাদের যে বাড়িতে বন্দি করে রাখা হয়েছে সেখানে দু'জন পুলিশ প্রহরায় রয়েছে। কিন্তু কোনও পুলিশের আধিকারিক এসে আমাদের কথা  শুনছেন না বা আমাদেরকে কবে ছাড়া হবে সে বিষয়ে কিছুই বলছেন না।” 

    ওড়িশা পুলিশের হাতে আটক হওয়া পশ্চিমবঙ্গের ফেরিওয়ালারা বলেন, “যেভাবে ওড়িশায় এসে তাঁরা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন একবার সেখান থেকে মুক্তি পেলে তাঁরা সেখানে আর কাজের জন্য ফিরবেন না।” সামশেরগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলেন, “ওড়িশায় বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাঙালিদের উপর অত্যাচার শুরু হয়েছে। বিজেপির কাছে বাঙালি হওয়া অপরাধ। তারা বাংলা এবং বাঙালিবিদ্বেষী।”

    তিনি আরও বলেন, “আটক ফেরিওয়ালাদের ছাড়ানোর জন্য ইতিমধ্যে প্রশাসন তৎপর হয়েছে। তাঁদের সমস্ত নথি ভদ্রক পুলিশকে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি বন্দি ব্যক্তিরা খুব শীঘ্রই মুক্তি পাবেন।”
  • Link to this news (আজকাল)