কেউ আছেন এক বছর, কেউ সাত! দীর্ঘ সময় পর বাংলা থেকে বাংলাদেশের ঘরে ফিরছেন ওঁরা
প্রতিদিন | ১৯ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: এসআইআর আতঙ্কে তটস্থ গোটা পশ্চিমবঙ্গ। বাংলাদেশেও চলছে অশান্তি। দুই পাশে অশান্তির মাঝেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে বাড়ি ফিরছে ৩০ জন। পেট্রোপল সীমান্ত দিয়ে আজ বুধবার রাজ্যের বিভিন্ন হোম থেকে ৩০ জন বাংলাদেশে ফিরছেন। এই ৩০ জনের মধ্যে কামাখ্যাগুড়ির তপোবন হোম থেকে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের বাড়িতে ফিরছে আনোয়ার হোসেন।
অন্যদিকে প্রায় এক বছর পর বাংলাদেশে বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে চলেছে বারো বছরের আরও এক কিশোর। কোনওভাবে ওপার বাংলা থেকে কাঁটাতার পেরিয়ে এ পারে পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশি ওই কিশোর। কোনওক্রমে ঠাঁই হয়েছিল উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের কুনোর হোমে।
মঙ্গলবার সকাল ৭টা সময় কামাখ্যাগুড়ির হোম থেকে আনোয়ারকে নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের দল পেট্রোপোল সীমান্তের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাতে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে রাত্রিবাসের পর আজ বুধবার বনগাঁর পেট্রোপল সীমান্তে উপস্থিত হবেন আনোয়ার। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে যাওয়া অন্য ২৯ জনের সঙ্গে সকাল ১১ টাতে বাংলাদেশে প্রবেশের কথা আনোয়ারের। দুই দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের বাড়িতে ফিরবে ৩০ জন। কামাখ্যাগুড়ির তপোবন হোমের সুপার নীতিশ কুমার পাহাড়ি বলেন, “প্রায় ৭ বছর আনোয়ার আমাদের হোমে ছিল। ১৫ বছর বয়সে আনোয়ার আমাদের হোমে এসেছিল। এখন সে অনেকটা বড় হয়ে গেছে। এখন হোমটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কারণ মোট ৩০ জন বাংলাদেশের বাড়িতে ফিরছে। একদিকে আনন্দ হচ্ছে। কারণ শেষমেশ ওরা ঘরে ফিরছে।”
অন্যদিকে এদিন উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ কর্ণজোড়া স্পোর্টস কমপ্লেক্সে মিলিত হয়েছিল জেলার বিভিন্ন হোমের কিশোর কিশোরীরা। ওই অনুষ্ঠানে বারো বছরের ওই কিশোরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা ঘোষণা করা জেলা প্রশাসন। এদিন রায়গঞ্জ মহকুমাশাসক তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ থেকে ভুল করে কিশোরটি এপারে পৌঁছে গিয়েছিল। তারপর আইন অনুযায়ী কালিয়াগঞ্জের একটি হোমে আশ্রয় দেওয়া হয়। এরপর অবশ্য বাংলাদেশের হাই কমিশনার সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। দুই দেশের মধ্যে আলোচনার পর কিশোরটিকে বাংলাদেশে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।”
এদিকে জানা গিয়েছে ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে এদেশে ঢুকে পড়েছিলে ১৫ বছর বয়সী আনোয়ার হোসেন। সেসময় মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছিল আনোয়ার। বাড়ি বাবা মা সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছিল না। আলিপুদুয়ার জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির মাধ্যমে আনোয়ারকে কামাখ্যাগুড়ির হোমে আনা হয়। তুফানগঞ্জ মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয় আনোয়ারের। ধীরে ধীরে সুস্থ্য হতে থাক। এখন আনোয়ারের বয়স ২২। একদিন নিজের নাম, বাড়ি, বাবা, মা সকলের কথাই বলতে পারে। আনোয়ার। সঙ্গে সঙ্গে চাইল্ড রাইটস এন্ড ট্রাফিকিং বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ টাস্ক ফোর্সের কাছে বিষয়টি জানায় জেলা চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটি। টাস্ক ফোর্সের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। আনোয়ারের দাবি করা নাম পরিচয় সব বাস্তবে পেয়ে যায় হাইকমিশন। আর তার পরে বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে আনোয়ারকে বাড়ি ফেরানোর বার্তা আসায় তাকে বাড়ি ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে ভারত সরকার। ঠিক হয় ১৯ নভেম্বর গোটা রাজ্যের ৩০ জনকে বাংলাদেশে ফেরাবে ভারত।
আলিপুরদুয়ার জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান অসীম বোস বলেন, ‘সবকিছুর উর্ধ্বে মানবিকতা। আনোয়ার বাংলাদেশের সন্তান হলেও ও যেন আমাদেরই একজন হয়ে উঠেছিল। ওর চিকিৎসা, সুস্থ্য হওয়া, দুষ্টুমি সব কিছু চোখের সামনে ভাসছে। তবে নিজের বাবা মায়ের কাছে সুস্থ্য হয়ে ফিরে যাওয়ার থেকে আনন্দের কিছু হয় না। আমাদের দুঃখ হলেও ওকে ঘরে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।”