• এসএসসি-র ফল ঘিরে নতুন বিতর্ক, আংশিক সময়ের শিক্ষকদের নম্বর বাতিলের ইঙ্গিত
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২০ নভেম্বর ২০২৫
  • এসএসসি-র সর্বশেষ ফল প্রকাশের পর আবারও বিতর্ক মাথাচাড়া দিচ্ছে। হাই কোর্টে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের একাধিক মামলার মধ্যেই এবার নতুন করে সামনে এসেছে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নম্বর দেওয়ার অভিযোগ। বুধবার বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে সেই মামলার শুনানিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ‘যদি কোনও আংশিক সময়ের শিক্ষক তথ্য গোপন করে নম্বর পেয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর প্রার্থীপদ বাতিল করা হবে’।

    প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট চলতি বছরের এপ্রিলে ২০১৬ সালের এসএসসি-র গোটা প্যানেল বাতিল ঘোষণা করে। নিয়োগ অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করায় একযোগে চাকরি হারান ২৫,৭৫২ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। আদালতের নির্দেশে তাঁদের মধ্যে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরেই দেখা যায়, পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অতিরিক্ত ১০ নম্বর যোগ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই নম্বর পেয়েছেন আংশিক সময়ের ২জন শিক্ষকও। প্রশ্ন উঠেছে, যদি সত্যিই আংশিক সময়ের শিক্ষকদের নম্বর দেওয়া হয়ে থাকে, তবে অন্যদেরও কেন দেওয়া হবে না! এই বিষয়েই মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে।

    বুধবার বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে ছিল সেই মামলার শুনানি। সেখানেই এসএসসি জানিয়েছে, ‘কেউ আংশিক সময়ের শিক্ষক হয়েও তথ্য গোপন করে নম্বর পেয়ে থাকলে তাঁর প্রার্থীপদ বাতিল হবে।’ এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২ ডিসেম্বর। ওইদিনই কমিশনকে আদালতে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।

    এদিকে একইদিনে ধরনার অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ চাকরিপ্রার্থীরা। বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের এজলাসে চাকরিপ্রার্থীরা এসএসসি ভবনের সামনে ধরনায় বসার অনুমতি চেয়েছেন। বিচারপতি সেই আবেদন গ্রহণ করেছেন। জানা গিয়েছে, আগামী সপ্তাহেই এই মামলার শুনানি হতে পারে। চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, এসএসসি যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে বহু অনিয়ম রয়েছে। তাই প্রতিবাদ জানাতেই তাঁরা ধরনায় বসতে চান। তবে আদালত শেষ পর্যন্ত কী নির্দেশ দেয়, সেদিকেই এখন সবার নজর।

    সম্প্রতি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশের পর অভিযোগ উঠেছে, অনেক ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা তালিকায় ডাকই পাননি। ফলে ক্ষোভ বেড়েছে, শুরু হয়েছে বিক্ষোভও। অভিযোগ, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অতিরিক্ত ১০ নম্বর যোগের নিয়ম বাতিল করে নতুন ভেরিফিকেশন তালিকা প্রকাশ করতে হবে। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যেই লাগাতার আন্দোলন শুরু হয়েছে।

    অন্যদিকে, এইসব বিতর্কের মধ্যেই বুধবার, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ১৩,৪২১টি শূন্যপদ পূরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিভাবকত্বে ও নির্দেশে চলতি বছরের মধ্যেই প্রায় ৫০,০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের লক্ষ্য নিয়েছে শিক্ষা দপ্তর।

    শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছেন, বুধবার থেকেই পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তাদের অনলাইন পোর্টাল চালু করছে, যেখানে টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীরা সরকার অনুমোদিত প্রাথমিক ও জুনিয়র বেসিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে আবেদন করতে পারবেন। তাঁর কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর ‘প্রজ্ঞা ও পথনির্দেশ’ এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করাবে।

    সব মিলিয়ে, অতিরিক্ত নম্বর প্রদান, নতুন তালিকার দাবি, সম্ভাব্য প্রার্থীপদ বাতিল— এসএসসি নিয়োগকে ঘিরে আবারও উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজ্যের শিক্ষাজগৎ ও চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)