• ফের বিএলও-র মৃত্যু! আদিবাসী মহিলা কর্মীর ঝুলন্ত দেহ গাছে, এসআইআর নিয়ে কমিশনের চাপকেই নিশানা করলেন মমতা
    আনন্দবাজার | ১৯ নভেম্বর ২০২৫
  • পূর্ব বর্ধমানের পর জলপাইগুড়িতে মৃত্যু হল এক বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও-র। অভিযোগ, কাজের চাপে আত্মঘাতী হয়েছেন ডুয়ার্সের মাল ব্লকের নিউ গ্লেনকো চা বাগান এলাকায় বাসিন্দা শান্তিমুনি ওঁরাও। বয়স মাত্র ৪৮ বছর।

    পেশায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী শান্তিমুনি রাঙামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০/১০১ নম্বর বুথের বিএলও ছিলেন। বুধবার ভোরে বাড়ির সংলগ্ন একটি গাছে ওড়নার ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর অকালমৃত্যুতে নির্বাচন কমিশনকে দুষেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, কমিশনের ‘অপরিকল্পিত কাজের’ জন্য একের পর এক মৃত্যু ঘটছে বাংলায়। তিনি এসআইআরের কাজ বন্ধ রাখার জন্য কমিশনকে আবেদন করেছেন।

    মৃতার পরিবারের অভিযোগ, বিএলও হওয়ার পর থেকেই অতিরিক্ত কাজের চাপ সামলাতে পারছিলেন না শান্তিমুনি। সারাদিন অঙ্গনওয়াড়ির কাজ, তার পর বাড়ির বিভিন্ন দায়িত্ব সামলে রাতের বেলা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম পূরণ করানো, সব মিলিয়ে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছিলেন তিনি। মৃতার স্বামী সুখ এক্কা বলেন, “ফর্ম সব বাংলায়। কিন্তু এখানে বেশির ভাগই হিন্দিভাষী মানুষ বাস করেন। ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। প্রতি দিন সন্ধ্যায় বাড়িতে লোকজন আসত। ও এই চাপ নিতে পারছিল না। কাজ থেকে অব্যাহতি চাইতে ব্লকে (অফিসে) গিয়েছিল। কিন্তু ওকে বলা হয়, নাম আছে, কাজ করতেই হবে। এই কথাই তাকে আরও ভেঙে দেয়।” মৃতার পরিবার সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমোতে যান শান্তিমুনি। ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধিয়ে সাধারণত রান্নাঘরে যেতেন তিনি। কিন্তু বুধবার সেখানে তাঁকে না দেখে খোঁজ করা হয়। তখনই বাড়ির পাশে তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখা যায়।

    স্থানীয় সূত্রে খবর, মাল থানার পুলিশ গিয়ে ওই বিএলও-র দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার খান্ডেবাহালে উমেশ গণপথ বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ বিএলও-র মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ছুটে গিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর এবং আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী বুলুচিক বরাইক। তিনি পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘‘এসআইআর ফর্মের কাজ নিয়ে সর্বত্র আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আদিবাসী অধ্যুষিত হিন্দিভাষী এই অঞ্চলে বাংলায় ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে একের পর এক ভুল হচ্ছিল। সেই আতঙ্ক এবং মানসিক চাপে পড়ে শান্তিমুনি শেষ পর্যন্ত এমন পদক্ষেপ করেছেন।’’ মন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘মৃতার পরিবারটির পাশে রাজ্য সরকার থাকবে।’’

    দিন কয়েক আগেই পূর্ব বর্ধমান জেলায় ব্রেন স্ট্রোক হয়ে মৃত্যু হয় বিএলও নমিতা হাঁসদার। মেমারির চক বলরামপুরে ২৭৮ নম্বর বুথের বিএলও ছিলেন তিনি। অসুস্থ নমিতাকে কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।

    রাজ্যে দ্বিতীয় বিএলও-র মৃত্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘আজ আবার আমরা জলপাইগুড়ির মাল এলাকায় একজন বুথ লেভেল অফিসারকে হারিয়েছি। তিনি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ছিলেন। এসআইআরের কাজের অসহনীয় চাপের মুখে আত্মহত্যা করেছেন।’’ মমতার দাবি, রাজ্যে এসআইআর ঘোষণার পরে ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। কেউ ভয়ে, কেউ অনিশ্চয়তায়, আবার কেউ মানসিক চাপ তো কেউ কাজের চাপে নিজেকে শেষ করে দেন। মমতা লেখেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অপরিকল্পিত অভিযানে প্রচণ্ড কাজের চাপে এতগুলো মূল্যবান জীবন হারিয়ে যাচ্ছে।’’ তিনি আরও জানান, এসআইআরের জন্য আগে ৩ বছর সময় লাগত। এখন নির্বাচনের আগে ‘রাজনৈতিক প্রভুদের’ খুশি করার জন্য পুরো কাজ শেষ করতে ২ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিএলও-দের উপর অমানবিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘‘আমি নির্বাচন কমিশনকে বিবেক দিয়ে কাজ করার আবেদন করছি। আরও প্রাণহানির আগে অবিলম্বে এই অপরিকল্পিত অভিযান (এসআইআর) বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)