• সন্দেহজনক ভোটারের নাম বাদ দিতে পারবেন বিএলও, সিদ্ধান্ত কমিশনের
    বর্তমান | ২০ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘সন্দেহজনক ভোটারে’র নাম বাদ দেওয়ার ক্ষমতাও বিএলওদের হাতে! এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। আর তাই মঙ্গলবার রাতেই বিএলও অ্যাপে বিশেষ বদল আনা হয়েছে। এই অ্যাপ মারফত ইনিউমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজেশনের কাজ করছেন বিএলওরা। সেখানে এবার একটি বিশেষ অপশন দেওয়া হয়েছে। তার মাধ্যমে বিএলওরা পূরণ করা ইনিউমারেশন ফর্ম ফের যাচাই করতে পারবেন। প্রয়োজনে সংশোধন তো বটেই, সেইসঙ্গে কোনও ভোটারকে তাঁরা চাইলে ‘আনম্যাপ’ও করে দিতে পারবেন।

    সোজা কথায়, এই অপশনের মাধ্যমে কোনও ভোটারের পূরণ করা ইনিউমারেশন ফর্ম আপলোড করতে গিয়ে ভুল হয়েছে মনে হলে, বিএলওরা পুনরায় তা যাচাই করে সংশোধন করার ছাড়পত্র পেয়ে গেলেন। এছাড়াও অ্যাপে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ম্যাপিংয়ের (শেষ এসআইআরের বছরের ভোটার তালিকায় সংশ্লিষ্ট ভোটারের নাম) ক্ষেত্রে ভুল হয়ে থাকলে তা বাতিল করা বা সংশ্লিষ্ট ভোটারকে আনম্যাপ করার ক্ষমতা থাকছে বিএলওদের হাতে। কমিশনের দাবি, একাধিক ক্ষেত্রেই বিএলওদের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত অভিযোগ এসেছিল। তাঁদের বক্তব্য ছিল, কাজ করতে গিয়ে ভুল হয়ে গেলে তা সংশোধনের কোনও সুযোগ নেই অ্যাপে। অথচ সেই ভুলের মাশুল হিসেবে শাস্তির মুখে পড়তে হবে বিএলওকেই। এসব অভিযোগ পাওয়ার পরই অ্যাপে এই বিশেষ পরিবর্তন করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে এই অপশন কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। অনেক বিএলওর দাবি, এই অপশন দেওয়ার ফলে এবার কাজে বাড়তি সুবিধা হবে। ভুল-ভ্রান্তি সংশোধনের উপায় থাকবে। 

    তবে কমিশনের এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক বিতর্কও উসকে দিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, এমন অপশনে এবার সন্দেহজনক ভোটারদের বাদ দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই অপশনটিকে রাজৈনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে না তো? অর্থাৎ যোগ্য ভোটারদের আনম্যাপ করে দেওয়া হবে না তো? বিশেষত বিহার এসআইআর পর্বে এমন বহু যোগ্য ভোটারকে মৃত বা রাজ্যছাড়া দেখিয়ে খসড়া তালিকা থেকে নাম বাতিল করা হয়েছিল। খসড়া তালিকায় বিহারে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছিল। সবচেয়ে বেশি নাম বাদ পড়েছিল সীমান্ত এলাকায়। অন্তত ৮০টি বিধানসভা ক্ষেত্রে মৃত দেখিয়ে এমন ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, যাঁদের বয়স ৫০-এর কম। ভাগলপুরে একটি পোলিং স্টেশনে ৫৬ জন মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৫০ জনেরই বয়স ছিল ৫০-এর কম।  

    শেষে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপে সেইসব ভোটারের সিংহভাগের নাম যাচাইয়ের পর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয়েছিল কমিশন।  শুধুমাত্র পূর্ণিয়া জেলাতেই খসড়া তালিকায় প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার পর চূড়ান্ত তালিকায় ৮৩ হাজার ভোটারের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে কমিশন। নির্বাচন কমিশন যে রীতিমতো চাপে পড়েছিল, তা প্রমাণ হয়ে যায় খসড়া তালিকা এবং চূড়ান্ত তালিকার পার্থক্য দেখলেই। চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়া ভোটারের সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৪৭ লক্ষে। অর্থাৎ, চাপে পড়ে এবং নতুন ভোটার যোগ হওয়ার পর ২১ লক্ষ ৫৩ হাজার নাম অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয়েছে কমিশন। পশ্চিমবঙ্গে সেই অঙ্কই এবার মাথাচাড়া দিচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বিএলওর কাজ ফর্ম বিলি এবং সংগ্রহ করা। তারপর তা কমিশনের সার্ভারে তুলে দেওয়া। একজন ভোটারকে বাদ দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার মানে কী? স্থানীয় স্তরের রাজনীতি যদি তাঁদের প্রভাবিত করে, সেই দায় কে নেবে? এসআইআরের দ্বিতীয় পর্বে বিহারেরই পুনরাবৃত্তি হবে না তো? 
  • Link to this news (বর্তমান)