রামমোহন, সাভারকারকে নিয়ে তীব্র বিতণ্ডা তৃণমূল-বিজেপির, উত্তপ্ত কলকাতা পুরসভার অধিবেশন
বর্তমান | ২০ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বেনজিরভাবে উত্তাল হল কলকাতা পুরসভার অধিবেশন। বুধবার অধিবেশন শুরু থেকে ভালোই চলছিল। পুর-পরিষেবার সংক্রান্ত নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছিলেন জনপ্রতিনিধিরা। শেষলগ্নে এসে আচমকাই নজিরবিহীনভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অধিবেশন। তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল ও বিজেপি কাউন্সিলাররা। এমনকি, রণং দেহি মেজাজে অবতীর্ণ হন স্বয়ং মেয়র ফিরহাদ হাকিমও।
উত্তেজনার সূত্রপাত কীভাবে? এদিন তৃণমূল কাউন্সিলার অরূপ চক্রবর্তী একটি প্রস্তাব আনেন। তাতে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎদের অসম্মান ও অবমাননা করা হচ্ছে বিজেপি নেতৃতাধীন রাজ্যগুলিতে। রাজা রামমোহন রায়কে ব্রিটিশদের চর বলা থেকে শুরু করে অসমে রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা গাইলে গ্রেফতারি কিংবা কয়েকবছর আগে কলকাতায় বিদ্যাসাগর মূর্তি ভাঙা। বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রামে বেশি অবদান। তাদেরকেই আজ সব থেকে বেশি লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে।’ এই কথা বলে তিনি কলকাতা পুরসভার ‘পুরশ্রী’ পত্রিকায় রাজা রামমোহন রায়কে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ প্রকাশের দাবি রাখেন। এই প্রস্তাব উত্থাপন করতে গিয়ে অরূপ বাংলার অস্মিতা নিয়ে সরব হওয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী কিংবা কর্ণাটকের বিজেপি সাংসদের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান।
এ প্রসঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন বিজেপি কাউন্সিলার সজল ঘোষ। তিনি জানান, এই প্রস্তাবের সঙ্গে তিনি আংশিক সহমত। বাংলার মনীষীদের অপমান করাটা ঠিক হয়নি। তারপরই সজল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের পুরোনো কিছু বক্তব্য তুলে ধরে পাল্টা আক্রামণ শানান। তাতেই ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে তুমুল চিৎকার শুরু হয়। আরও আক্রমণাত্মক হয় ওঠেন সজল। তৃণমূল ও বিজেপি কাউন্সিলারদের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়। পাশাপশি, এদিন ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিনে তাঁর নামাঙ্কিত রাস্তার নাম বদলে কার্নিভাল সরণি করার জন্য তৃণমূল কাউন্সিলার তপন দাশগুপ্ত যে প্রস্তাব এনেছিলেন, তারও নিন্দা করেন সজল। সাভারকারকে বীর ও দেশপ্রেমিক আখ্যা দেন।
এরপর তৃণমূলের পক্ষে দেবাশিস কুমার বলেন, ‘সাভারকার সাতবার মুচলেকা দিয়েছিলেন। একটা পুরশ্রীর সংখ্যা তৈরি হোক, সাভারকারের মতো ব্যক্তিদের নিয়ে, যাঁরা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে বেইমানি করেছিলেন।’ তখন ফর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অধিবেশন। শেষে বলতে ওঠেন মেয়র। তিনি ইংরেজদের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পলিসির সঙ্গে বিজেপির জাতপাতের রাজনীতি, ধর্মীয় বিদ্বেষকে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে তুমুল সমালোচনা করেন। সজল ঘোষ হইচই করলে মেয়র আরও গলা চড়ান। তিনি বলেন, ‘বাংলায় এসব চলবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলা এটা। বাংলার মনীষীদের নিয়ে পুরশ্রীর বিশেষ সংখ্যা হবে।’ তাঁর এই ঘোষণা শুনে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান ওঠে অধিবেশনে।