নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সিবিআই থেকে বলছি। বিমানবন্দরে আপনার নামে পার্সেল এসেছে। তাতে নিষিদ্ধ মাদক রয়েছে। পাশাপাশি আপনার নামে রয়েছে মোবাইলের একাধিক সিমকার্ড। আপনাকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হয়েছে। গ্রেফতারির হাত থেকে বাঁচতে চাইলে আপনি আমাদের পাঠানো অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠান। ৮৪ বছরের বৃদ্ধ ভয়ে প্রতারকদের দাবি মতো টাকা পাঠিয়ে দেন। এভাবে ধাপে ধাপে তিনি ১ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা দেন তাদের। তারপরেও টাকা দাবি করে বৃদ্ধের কাছে ফোন আসায় তিনি বাধ্য হয়ে নেতাজিনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে সাউথ সাবার্বান ডিভিশনের সাইবার ক্রাইম সেল।
পুলিশ সূত্রে খবর, কিছুদিন আগে বৃদ্ধকে পুলিশ অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফোন করে জালিয়াতরা। তাঁকে বলা হয়, মুম্বই বিমানবন্দরে আসা একটি পার্সেলে নিষিদ্ধ মাদক মিলেছে। কথায় কথায় বৃদ্ধের থেকে আধার নম্বর জেনে নিয়ে তারা বলে একাধিক সিম কার্ড তোলা হয়েছে এই নথি দিয়ে। কিছুক্ষণ পর সিবিআই পরিচয় দিয়ে ফোন করে প্রতারকরা। অভিযোগকারীকে বলা হয়, তারা এই ঘটনার তদন্ত করছে। এরপর তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠানো হয়। তা দেখে ভয় পেয়ে যান অভিযোগকারী। কী করতে হবে, জানতে চাইলে তাঁকে একটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে টাকা পাঠাতে বলে প্রতারকরা। টাকা পেলে তাঁকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হবে না বলে আশ্বাস দেয় তারা। বৃদ্ধ তাদের কথামতো ব্যাংকে থাকা ১ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা ধাপে ধাপে দিয়ে দেন। তারপরেও টাকার খিদে মেটেনি তাদের। তারা বলে, টাকা না দিলে তাঁকে গ্রেফতার করতে যাবে সিবিআইয়ের টিম। তখন তিনি বুঝতে পারেন, প্রতারকদের পাল্লায় পড়েছেন। এরপর অভিযোগ করেন নেজাজিনগর থানায়। সাউথ সাবার্বান ডিভিশনের সাইবার ক্রাইম সেল তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ তদন্তে নেমে দেখে, যে সমস্ত অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে, সেগুলি সবই ভাড়ার অ্যাকাউন্ট। একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে গুজরাতের ভাদোদরায়। সেখানে ঢুকেছে ৬৩ লক্ষ ৩৬ হাজারেরও বেশি টাকা। ওই অ্যাকাউন্টটি ফ্রিজ করা হয়। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে জমা পড়েছে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা। সেটিও ব্লক করেন অফিসাররা। অভিযোগ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে ৬৪ লক্ষ ৭৩ হাজারের বেশি টাকা উদ্ধার করেন তাঁরা।