• পুরসভার কাজের জেরে নির্জলা স্কুল, পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হল ছুটি
    আনন্দবাজার | ২০ নভেম্বর ২০২৫
  • জল পরিশোধনকারী যন্ত্র শুকনো। পানীয় জলের জোগান নেই। শৌচাগারও জলহীন। শিক্ষক-শিক্ষিকারা রাস্তার গণশৌচাগার ব্যবহার করছেন। ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে তাদের পুরসভার কলের জল পান করতে দেন নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। তার জেরেই বাধ্য হয়ে পরীক্ষা বাতিল করে স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হল। এমনই এক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে তিন-চার দিন কার্যত নির্জলা হয়ে কাটাল একটি স্কুল। অবশ্য সোমবার সন্ধ্যায় সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে দাবি করেছে কলকাতা পুরসভা।

    মধ্য কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট ও সুকিয়া স্ট্রিটের সংযোগস্থলে রয়েছে ওই বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলটি। যেখানে মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারের পড়ুয়ারা লেখাপড়া করে। সাড়ে সাতশোর বেশি পড়ুয়া ও পঞ্চাশ জন শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী সম্বলিত একটি ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে চলে স্কুলটি। অভিযোগ, স্কুলের সামনের রাস্তায় কলকাতা পুরসভার জলের পাইপলাইন বসানোর কাজ চলার সময়ে স্কুলের জলের পাইপলাইন কেটে যায়। তার জেরেই গত বৃহস্পতিবার থেকে চরম জলকষ্টের সম্মুখীন হন সবাই।

    স্কুলের সম্পাদক দেবশ্রী চক্রবর্তী জানান, রবিবার স্কুলের বাইরে একটি কল বসিয়ে দেয় পুরসভা। সেখান থেকে পাইপ দিয়ে দু’টি ড্রামে জল ভরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু জলের চাপ এতটাই কম যে ড্রাম অবধি জল প্রায় পৌঁছচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার স্কুলে পরীক্ষা বাতিল করতে তাঁরা বাধ্য হন বলেই জানান দেবশ্রী। সোমবার দুপুরে শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে স্কুলে শৌচাগার ব্যবহার করা সম্ভব হয় নি জলের অভাবে। এ নিয়ে তাঁরা কলকাতা পুরসভার দ্বারস্থ হলেও জলের সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং, শিশু দিবসের দিন পড়ুয়ারা স্কুলে এলেও কোনও অনুষ্ঠান করা যায় নি। বাইরে থেকেই তাদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, মগে করে জল নিয়ে শৌচাগারে যেতে হয়েছে শুরুর দিকে। কখনও শিক্ষকেরা গণশৌচাগার ব্যবহারে বাধ্য হয়েছেন। ছাত্রীদের সমস্যার কথা ভেবেই সোমবার থেকে স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।

    তাঁরা জানান, তাঁদের স্কুলের বাড়িটি একশো বছরেরও বেশি পুরনো। কখনও জলেরএমন সমস্যা হয় নি। কলকাতা পুরসভার জল নির্ধারিত সময়ে আসা মাত্রই সেই জল স্কুলে আসে। পাম্পের মাধ্যমে উপরে ট্যাঙ্কে তা সঞ্চয় করা হয়। ফলত সেই জলের লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সমগ্র স্কুলটি নির্জলা হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ জানান, জলের লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে পুরসভার মিস্ত্রিরা সমস্যার সমাধান করতে পারেন নি। উল্টে পুরসভার তরফে তাঁদের বেআইনি ভাবে জল নেওয়ার অভিযোগে বিদ্ধ করা হয়েছে।

    এ দিন ওই জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের বাইরের রাস্তা ভেঙে পড়ে রয়েছে। কাজ চলছে এলাকার জন্য জলের পাইপলাইন বসানোর। স্কুলের অশিক্ষক কর্মীরা দেখান, সদ্য বসা জলের পাইপলাইনের পাশে ভেঙে পড়ে রয়েছে তাঁদের স্কুলের জলের পাইপলাইনটি।

    অবশ্য কলকাতা পুরসভা দাবি করেছে যে সোমবার সন্ধ্যার পরে স্কুলের জলের লাইন সারাই করে দেওয়া হয়েছে। পাম্প চালিয়ে জল তোলা হয়েছে। স্কুলের সম্পাদিকা জানান, পুরসভার কাজ করতে আসার কথা তাঁরা জানেন। তবে পাম্প চালিয়ে জল তোলা যাচ্ছে কিনা, তা তাঁরা মঙ্গলবারেই বলতে পারবেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)