• ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’য় ছক ভেঙে মুখ, বিষয় তুলতে চায় সিপিএম
    আনন্দবাজার | ২০ নভেম্বর ২০২৫
  • অতীতে পদযাত্রা অনেক হয়েছে। এক সময়ে পথে নেমে নির্বাচনী সাফল্য এসেছে, আবার সাম্প্রতিক কালে আসেনি। এ বার পুরনো ছক ভেঙে ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’য় এগোতে চাইছে সিপিএম।

    কোচবিহারের তুফানগঞ্জ থেকে আগামী ২৯ নভেম্বর শুরু হবে ওই যাত্রা। রাজ্যের ১১টি জেলা ঘুরে প্রায় হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটিতে ১৭ ডিসেম্বর হওয়ার কথা সমাপ্তি সমাবেশ। তবে মূল যাত্রা-পথে নেই কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। আগে এমন যাত্রায় নির্দিষ্ট কিছু নেতৃত্বকে সামনে রাখা হত। দু’বছর আগে ডিওয়াইএফআই-এর ডাকে ‘ইনসাফ যাত্রা’ যেমন হয়েছিল সিপিএমের তৎকালীন যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে সামনে রেখে। যাত্রা শেষে ব্রিগেড সমাবেশ করেছিলেন মীনাক্ষীরা। কিন্তু ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’য় জেলা ও এলাকাভিত্তিক নেতৃত্বকে রেখে এগোনোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দলের রাজ্য নেতৃত্ব দফায় দফায় যাত্রাপথে মিছিল ও সমাবেশে শামিল হবেন। একটানা পদযাত্রার বদলে মাঝে মাঝেই থাকছে বাইক মিছিল, সভা এবং এলাকায় মত বিনিময়ের মাধ্যমে জনসংয‌োগের সূচি। মূল যাত্রা যেখান দিয়ে যাবে না, সে রকম অনেক জায়গায় উপ-যাত্রা হবে। যারা কোনও না কোনও বিন্দুতে মূল যাত্রাকে স্পর্শ করবে।

    ভোটের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, নারী নিরাপত্তা থেকে শুরু করে নদীর ভাঙন, উত্তরবঙ্গের সমস্যা বা মেট্রো রেল-সহ গণপরিবহণের সঙ্কটের কথা তুলে ধরা হবে ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’য়। বিধানসভা ভোটের আগে সংগঠনকে সচল করা এবং বিভিন্ন এলাকায় জনজীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে হাতিয়ার করা সিপিএমের লক্ষ্য। সেই সঙ্গেই রাজ্য থেকে কোনও নির্দিষ্ট নেতাকে ঠিক করে না-দিয়ে এলাকাভিত্তিক ‘মুখ’ তুলে আনতে চাইছে তারা।

    সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘মন্দির-মসজিদ বিভাজনের ছক থেকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কাজের মতো জীবন-জীবিকার নানা বিষয়কে রাজনীতির কেন্দ্রে তুলে আনতে চাই আমরা। রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিকল্প তৈরি করতে গেলে বামপন্থার পুনরুত্থান দরকার। তার জন্য মানুষের কাছে নতুন করে পৌঁছতে হবে, সেটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এই কর্মসূচি সেই প্রয়াসেরই অঙ্গ।’’ এর আগে রাজ্যে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ন্যায় যাত্রা’য় ডাক পেয়ে শামিল হয়েছিসেন সেলিম, সুজন চক্রবর্তীরা। সিপিএমের এই কর্মসূচির বিষয়েও অন্যান্য দলকে জানানো হবে এবং কোথাও কোথাও ‘সৌজন্য’ হিসেবে বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ দল বা সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ব্যক্তিরা যুক্ত হতে পারেন বলে সিপিএমের আশা। সেলিম বলেছেন, ‘‘অতীতে মানুষের সাড়া পেয়েছি। বিশ্বাস আছে, এ বারও পাব।’’

    ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’ উপলক্ষে বিশদে একটি তথ্যপঞ্জি তৈরি করেছে সিপিএম। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নানা সিদ্ধান্ত ও কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশিই বাংলায় ‘তোষণের ফলে মুসলিমদের হাতে সব ক্ষমতা’— বিজেপির এই প্রচারের বিপরীতে সেখানে দেখানো হয়েছে, রাজ্যে ২৯৯ জন আইএএসের মধ্যে ২০ জন (৬.৭%), ২৭৭ জন আইপিএসের মধ্যে ১২ জন (৪.৩%), রাজ্য পুলিশ সার্ভিসে ৫৪৩ জন আধিকারিকের মধ্যে ৫৩ জন (৯.৮%) মুসলিম। রাজ্যে মুখ্যসচিব বা রাজ্য পুলিশের শীর্ষ পদে কোনও মুসলিম মুখ আসেনি, এখন কোনও জেলাশাসক পদেও মুসলিম নেই।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)