• ডাক মেলেনি ইন্টারভিউয়ে, ফের সুপ্রিম-পথে ‘যোগ্য’রা
    এই সময় | ২০ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: আবারও দিল্লিতে আইনি লড়াইয়ের পথেই হাঁটছেন ২০১৬–এর চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা। আজ, বৃহস্পতিবার তাঁদের অনেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। সেখানে সুপ্রিম কোর্টে কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করাই তাঁদের লক্ষ্য। তাঁরা চান, পুরোনো চাকরিটাই যেন তাঁরা ফিরে পান। গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ একলপ্তে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ খারিজ করে নতুন করে নিয়োগের নির্দেশ দেয়। সেইমতো স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) একাদশ–দ্বাদশ ও নবম–দশমে শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে। কিন্তু একাদশ–দ্বাদশের ইন্টারভিউয়ের তালিকা প্রকাশের পরে দেখা যায়, তথাকথিত ‘নন–টেন্টেড’ বা ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের অনেকে তাতে ডাক পাননি। এরপরেই তাঁরা ৩ এপ্রিলের রায়ের কিছু অংশের পরিমার্জন চেয়ে কিউরেটিভ পিটিশন করতে চান।

    তাঁদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁদের বর্তমান চাকরি বহাল রয়েছে। কিন্তু নতুন নিয়োগ পরীক্ষায় তাঁরা ইন্টারভিউয়ে ডাক না–পাওয়ায় তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এই অবস্থায় শীর্ষ আদালত যাতে তাঁদের কথা সহানুভূতির সঙ্গে বিচার করে, সেই আর্জিই জানাতে চলেছেন এই ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা।সুপ্রিম কোর্টে চাকরি বাতি‍লের নির্দেশের পরিবর্তন চেয়ে এর আগে রাজ্য সরকার ও এসএসসি রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছিল। কিন্তু সেই পিটিশন খারিজ হয়ে যায়। শীর্ষ আদালত একাধিকবার জানিয়ে দিয়েছে, তারা যে রায় দিয়েছে, তা আর পরিবর্তনের পক্ষে তাদের সায় নেই। এই পরিস্থিতিতেও তথাকথিত ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের তরফে কিউরেটিভ পিটিশন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

    অন্য দিকে, যাঁদের আন্দোলনের জন্য এই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পর্দাফাঁস হয়, সেই ২০১৬–এর ওয়েটিং লিস্টে থাকা তথাকথিত ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থার কোনও বদল হলো না। কলকাতার রাজপথে টানা ১৪০০ দিন ধরে তাঁরা ধর্না দিয়েছিলেন। ২০২৫–এর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাঁদের সিংহভাগেরই চাকরি হয়নি বলে খবর। এখনও নবম–দশমের ফলাফল প্রকাশ হয়নি। কিন্তু যা ট্রেন্ড, তাতে ওই পরীক্ষাতেও খুব আশার আলো দেখছেন না এই চাকরিপ্রার্থীরা।

    আইনজ্ঞরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ে যদি গুরুতর ভাবে ন্যায়ের ব্যতিক্রম হয়ে থাকে, তবে তা পরিমার্জনের জন্য কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করা যায়। ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৩৭ দ্বারা নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। চূড়ান্ত রায়ের পরে রিভিউশন পিটিশনও বাতিল হলে সর্বোচ্চ আদালতে এই কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করা যায়। আইনজীবীদের বক্তব্য, কিউরেটিভ পিটিশন তখনই দাখিল করা যায়, যখন বাদী পক্ষ প্রমাণ করতে সক্ষম হবেন যে, আগের রায়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না থাকার কারণে বিচারে ন্যায়ের ব্যতিক্রম হয়েছে।

    এই ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের দাবি, চূড়ান্ত রায়ের আগে যে সব শুনানি চলেছিল তাতে এসএসসি এবং রাজ্য সরকার স্পষ্ট করে বলতে পারেনি, কতজন ‘টেন্টেড’ বা দাগি প্রার্থী ২০১৬–এর প্যানেলে ছিলেন। তাই আদালত একলপ্তে ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরিই বাতিল করে দেয়। কিন্তু এখন তাঁদের কাছে এসএসসি–র ভেরিফাই করা ‘টেন্টেড’ তালিকা রয়েছে। আর সেটা দেখিয়েই তাঁরা আদালতের কাছে আবেদন করতে চাইছেন, যাঁরা ‘যোগ্য’ তাঁদের চাকরি যেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের তরফে শুভজিৎ দাস বুধবার বলেন, ‘আমাদের পুরোনো চাকরিটা ফিরে এলেই এত ঝামেলা আর থাকবে না। ফ্রেশাররাও সুযোগ পাবেন। আমরাও আর অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকব না।’

    শুভজিৎ জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত ১৭৫ জন শিক্ষক এমন রয়েছেন যাঁরা ‘যোগ্য’ হয়েও ফের একাদশ–দ্বাদশের পরীক্ষায় বসেছিলেন। কিন্তু ইন্টারভিউয়ে ডাক পাননি। এঁদের মধ্যে আবার ১৪৮ জন শিক্ষক এমন যাঁরা একাদশ–দ্বাদশের ‘সিঙ্গল সাবজেক্ট’ টিচার। অর্থাৎ নবম–দশমের পরীক্ষাতেও তাঁরা বসতে পারেননি। ফলে তাঁরা ইন্টারভিউয়ে ডাক না পাওয়ায় ডিসেম্বরের পরে তাঁদের আর চাকরিটাই থাকছে না।

    অন্য দিকে, নিজেদের বঞ্চনার কথা শোনাচ্ছেন ২০১৬–এ ওয়েটিং লিস্টে থাকা ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের তরফে শহিদুল্লাহ বলছেন, ‘আমাদের হাতে গোনা দু–একজনই এবার একাদশ–দ্বাদশের ইন্টারভিউয়ে ডাক পেয়েছেন। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের জন্য কোনও ছাড় না থাকার জন্যই এই অবস্থা। এমনকী বয়স পেরিয়ে যাওয়াতেও অনেকে পরীক্ষায় বসতে পারেননি।’

  • Link to this news (এই সময়)