• দুই খুদের মৃত্যু, শোকার্ত গ্রামে বন্ধ এসআইআর
    আনন্দবাজার | ২০ নভেম্বর ২০২৫
  • রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরবাইক নিয়ে শিশু দু’টিকে খেলতে দেখেছিল অনেকেই। কিছু ক্ষণ পরেই তাদের নিথর দেহ ভাসতে দেখা যায় পুকুরে। অন্য কেউ নন, দেহ তুলতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জলে ঝাঁপিয়েছিলেন তাদের মায়েরাই। সন্তানের নিথর দেহ কোলে তুলে পুকুর পাড়ে নিয়ে আসেন তাঁরা। তার পরে চোখের জল আর বাঁধ মানেনি। গ্রামের অনেকের অনুমান, রাজদীপ ও শৌভিক হাজরা পুকুর পাড়ে খেলছিল। এক জনকে জলে পড়ে যেতে দেখে আর এক জন বাঁচাতে গিয়েছিল। তার পরেই এই মর্মান্তিক পরিণতি।

    বুধবার সারা দিন মেমারির পূর্ব কাশিয়াড়া ডুবে ছিল শোকে। মুখে মুখে ফিরেছে সেই ঘটনা। অধিকাংশ বাড়িতেই হাঁড়ি চড়েনি। বন্ধ দোকানপাট। গ্রামের মোড়ে মোড়ে জটলা। চেনা কোলাহল যেন বহু পিছনে ফেলে এসেছে পূর্ব কাশিয়াড়া। গ্রামের হাজরা পাড়ার ভিতরে ওই দুই শিশুর বাড়ির সামনে সময় যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। ভিতর থেকে ভেসে আসছে বুক ফাটা কান্নার রোল। স্তম্ভিত প্রত্যেকে। চোখে একটাই প্রশ্ন— বাড়ির মাত্র ১৫০ মিটার দূরে ওই পুকুরে ছেলে দু’টির পড়ে যাওয়া কী করে সকলের চোখ এড়িয়ে গেল।

    ধরা গলায় রাজদীপের মা রিতা বলছিলেন, “ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখি, ওর চটি পড়ে রয়েছে। কিছু ক্ষণ পরে দেখি পুকুরে উপুড় হয়ে ভাসছে আমার এক মাত্র ছেলে। কিছু না ভেবে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ি। কোলে করে ছেলেকে তুলে নিয়ে আসি।” শৌভিকের দাদা রয়েছে। তার মা চৈতালি বলেন, “তখনও আমি ছেলেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। না পেয়ে মনটা কেমন যেন হচ্ছিল। কেউ জলে নামছে না দেখে আমি পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছিলাম। সেখান থেকে ছেলের দেহ তুলে নিয়ে এসেছি।”

    আশেপাশের গ্রামও শুনেছে দুই শিশুর মর্মান্তিক পরিণতির কথা। এ দিন ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল গ্রামে। গ্রামের দেড় কিলোমিটার দূরে রয়েছে তৃণমূলের সহায়তা শিবির। সেখানে গণনাপত্র পূরণ করাতে কেউ আসেননি। তৃণমূলের কর্মীরাও শিবিরে বসেননি। তৃণমূল ব্লক সভাপতি নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আশপাশের মানুষ ওই পরিবারের পাশে রয়েছেন। সকলের মন খারাপ। এই অবস্থায় শিবির খুলে রাখলে তা হত অমানবিক কাজ।”

    রাজদীপ-শৌভিকের বাড়ির অদূরে একটি ফাঁকা জায়গায় রান্না হয়েছে তাদের পরিজনদের জন্য। গ্রামবাসী সুরজিৎ দাসের কথায়, “আমরা যতটা সম্ভব পাশে থাকার চেষ্টা করছি। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।” আর এক বাসিন্দা সন্তোষ হাজরা বলেন, “সম্পর্কে আমি ওই দু’জনের দাদু হই। ওরা বাইক নিয়ে খেলা করছিল। তখনই বিপদ ঘটতে পারত। সেখান থেকে ওদের সরিয়ে ওষুধ আনতে গিয়েছিলাম। তার মধ্যেই ঘটনাটি ঘটে গেল। কেবল ভাবছি, কেন যে ওষুধ আনতে গেলাম।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)