শীত পড়তেই পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করেছে পূর্বস্থলীর চুপি পাখিরালয়ে। ছাড়িগঙ্গায় এ বার কচুরিপানা কম থাকায় পাখির সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করছেন পক্ষীপ্রেমীরা। মহকুমা প্রশাসন জানিয়েছে, পাখিরালয়ে আসা পর্যটকদের আনন্দ দিতে বেশ কিছু পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই পর্যটকদের ভিড় জমে এই পাখিরালয়ে। ডানা মেলে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পরিযায়ী পাখিদের উড়ে যাওয়া, ডুব দিয়ে মাছ ধরা দেখতে আসেন তাঁরা। আশিটির বেশি নৌকা রাখা থাকে পাখি দেখানোর জন্য। পাখিরালয়ে গিয়ে দেখা গিয়েছে, পোচার্ড, মুরহ্যান, ব্ল্যাক আইবিস, কটনটিল, গ্রে হেরনের মতো বেশ কয়েকটি প্রজাতির পাখি এসে গিয়েছে। যেখানে কচুরিপানা কম, সেখানে পাখিদের আনোগোনা বেশি।
চুপি জলাশয়ের পাড়ে রয়েছে সরকারি, বেসরকারি বেশ কিছু কটেজ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শীত বাড়ছে। পরিস্থিতি যা তাতে ভাল সংখ্যায় পরিযায়ী পাখি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কয়েকটি প্রজাতির পরিযায়ী পাখি কচুরিপানার ভিতর থেকে পোকামাকড় ধরে খায়। ফলে জলাশয়ের কিছু কিছু জায়গায় কচুরিপানার প্রয়োজন রয়েছে।’’ প্রাক্তন সাংসদ সুনীল মণ্ডলের তহবিলের ৪০ লক্ষ টাকা থেকে পাখিরালয়মুখী রাস্তায় চওড়া গার্ডওয়াল তৈরি করা হচ্ছে। এতে পর্যটকদের গাড়ি নিয়ে যাতায়াতে সুবিধা হবে বলে জানান তিনি। এর পাশাপাশি কোটি টাকা ব্যয়ে জেলা প্রশাসন ছাড়িগঙ্গার পাড়ে পর্যটকদের সুবিধার জন্য বিশেষ একটি কেন্দ্র গড়ছে। যেখানে নজরমিনার, রেস্তোরাঁ, অডিয়ো-ভিস্যুয়াল ঘরে পাখি চেনার সুযোগ থাকবে। জমি চিহ্নিত করে মাটি পরীক্ষা-সহ বেশ কিছু কাজ এগিয়ে গিয়েছে।সব ঠিক থাকলে এই শীতেই প্রকল্পটি চালু হয়ে যাবে বলে জানা গিয়েছে। মহকুমাশাসক (কালনা) অহিনসা জৈন বলেন, ‘‘চুপি পাখিরালয়ে একটি ডেটা ইন্টারপ্রিটিশন কেন্দ্র গড়া হবে। কিছু গাইডও তৈরি করা হবে। যাঁরা পর্যটকদের সাহায্য করবেন।’’
পাখিরালয়ে দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রদীপ বারুই জানান, সপ্তাহ খানেক হল পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়াও অনুকূল। এমনিতেই পাখিরালয় চত্বরে মদ্যপান, জোরে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ। তবে পাখিদের কথা ভেবে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করা, বড় রাঙামুড়ি পাখিদের খাওয়ার মতো সবুজ শ্যাওলা বেশি করে তৈরি করা, ভাগীরথীর সঙ্গে ছাড়িগঙ্গার যোগ থাকা চ্যানেলটি সংস্কার, রাতে মাছ ধরা বন্ধ করার মতো বিষয়গুলি ভাবতে হবে প্রশাসনকে। কলকাতা থেকে পাখি দেখতে আসা সঞ্জয় সরকার বলেন, ‘‘প্রতিবার শীতেই আসি। সারা দিন ঘুরে প্রচুর ছবি তুলি। পর্যটকদের জন্য প্রকল্প গড়লেই হবে না, প্রশাসনকে পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ পর্যটকদের সংখ্যা বাড়লে তাঁদের চিৎকার চেঁচামেচিতে পাখির দল দূরে সরে যায়।’’