রাজ্যজুড়ে চলছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআই আর) প্রক্রিয়া। গত ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে বিএলও-দের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গণনাপত্র বিলির কাজ। পূরণ করা গণনাপত্র ভোটারদের বাড়ি থেকে নিয়ে যাবেন বিএলও-রা। এমনই নির্দেশ কমিশনের। বিভিন্ন এলাকায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, গণনাপত্র পূরণ করতে গিয়ে জেরবার হচ্ছেন বহু মানুষ। বেশি সমস্যায় পড়েছেন গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত মানুষজন। গণনাপত্র পূরণের জন্য নানা জায়গায় ঘুরছেন তাঁরা। অভিযোগ আসছে, তাঁদের আর এই অসহায়তার সুযোগ নিয়ে পকেট গরম করছেন এক শ্রেণির মানুষ।
বিভিন্ন সূত্রের খবর, গণনাপত্র পূরণের জন্য জন প্রতি ১০-৫০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন কেউ কেউ। অসহায় গরিব মানুষের একাংশ বাধ্য হচ্ছেন তাঁদের কষ্টার্জিত রোজগার দিয়ে গণনাপত্র পূরণ করাতে। গ্রামবাসীর একাংশের বক্তব্য, এসআইআর শুরুর আগে থেকেই এর সঙ্গে নাগরিকত্বকে জুড়ে প্রচার চলে বিভিন্ন এলাকায়। ফলে বিভ্রান্তি বেড়ে যায়। এই আবহে কেউই চান না, তাঁর গণনাপত্রে ভুল থেকে যাক। সেই কারণে গণনাপত্র পূরণের জন্য গ্যাঁটের কড়ি খরচেও রাজি তাঁরা।
রাধানগর গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গ্রামের দু’জন অর্থের বিনিময়ে গণনাপত্র পূরণ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘মাথাপিছু ২০ টাকা টাকা করে দিয়ে গণনাপত্র পূরণ করিয়েছি। গ্রামের অনেকেই করে নিয়ে যাচ্ছেন।’’ ভাতারের আমারুন ১ পঞ্চায়েতের রাধানগর গ্রামের সাবিনা ইয়াসমিন জানান, তাঁর বাড়িতে ছ’জন সদস্য রয়েছেন। তাঁদের গণনাপত্র পূরণ করার জন্য মাথাপিছু ২০ টাকা চাওয়া হয়েছিল তাঁর কাছে। কিন্তু তিনি টাকা দিয়ে গণনাপত্র পূরণ করাতে রাজি হননি। তবে অনেকেই বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে ফর্ম পূরণ করাচ্ছেন বলে তাঁর দাবি। গ্রামের আর এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘আমাদের এলাকায় দু’টি বুথে প্রায় দু’হাজার ভোটার রয়েছেন। বিএলও ছাড়া এক জন করে বিএলএ রয়েছেন সব দলের। তাঁদের পক্ষে এই বিপুল সংখ্যক গণনাপত্র পূরণ করা সম্ভব নয়। সেই সুযোগ নিচ্ছেন একশ্রেণির মানুষ। তাঁদের পৌষমাস, গরিব মানুষের সর্বনাশ। প্রশাসনের এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।’’
গ্রামের তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘গণনাপত্র পূরণের জন্য দলের কর্মীরা সব রকমের সাহায্য করছেন।’’
ভাতার ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গণনাপত্র পূরণ করার জন্য টাকা চাওয়ার অভিযোগ এসেছে কয়েকটি জায়গা থেকে। আমরা ওই সমস্ত জায়গায় নজরদারি চালানোর পাশাপাশি, সচেতনতা প্রচারের ব্যবস্থা করেছি। ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় গণনাপত্র পূরণে সহযোগিতার জন্য বাড়তি কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে।’’