হাকিমপুর সীমান্তে উত্তেজনা! বাংলাদেশে ফিরতে চাওয়াদের নিয়ে ‘ভুল খবর’ ছড়ানোর অভিযোগে বিক্ষোভ স্থানীয়দের, আক্রান্ত সংবাদমাধ্যম
আনন্দবাজার | ২০ নভেম্বর ২০২৫
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) ঘোষণার পর থেকেই অনেকে এ দেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরছেন। এমন লোকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে আনাগোনা বাংলাদেশিদের। তার মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের হাকিমপুর সীমান্তও ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ওই সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভুল খবর প্রচার করছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। বিক্ষোভও দেখান স্থানীয়েরা। দ্রুত পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমের কয়েক জন কর্মীকে মারধরও করা হয়।
গত মাস দুয়েক ধরে হাকিমপুর সীমান্ত দিয়ে এ দেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরছেন মানুষ। গত প্রায় আড়াই সপ্তাহ ধরে সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই কয়েক দিনে প্রায় দু’হাজার জন বাংলাদেশি সীমান্ত পেরিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালেও প্রায় ২০০ জন বাংলাদেশি জড়ো হয়েছিলেন হাকিমপুর সীমান্তের কাছে। অপেক্ষা ছিল সীমান্তের দরজা খোলার।
পরিবারের সঙ্গে কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলা থেকে এপার বাংলায় চলে এসেছিলেন আলেয়া বিবি। থাকতেন ডানকুনিতে। সেখানেই তাঁর স্বামী মাটি কাটার কাজ করতেন। কিন্তু এসআইআর ঘোষণার পর থেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাই বাড়ি ফিরছেন তাঁরা। আলেয়ার কথায়, ‘‘আমাদের কাছে কোনও কাগজপত্র ছিল না। আমরা এখানে কোনও সুযোগ-সুবিধাও পেতাম না।’’ একই দাবি সেলিম সরদারের।
স্থানীয়দের দাবি, একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে হাকিমপুর চেকপোস্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরেই শান্তিপূর্ণ ভাবেই এই কাজ চলছে। কিন্তু সম্প্রতি কিছু সংবাদমাধ্যম এই খবর প্রচারের সময় উস্কানিমূলক মন্তব্য বলে স্থানীয়দের দাবি। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, নির্দিষ্ট একটি সংবাদমাধ্যম বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একটি বিক্ষোভ প্রচার করছিল। বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা ছিল, ‘‘রোহিঙ্গা দেশ ছাড়ো!’’ স্থানীয়দের কথায়, ‘‘এই সব কথা বলে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের এখানে কোনও রোহিঙ্গা নেই। সাজানো বিক্ষোভ।’’ স্থানীয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়, তাদের এমন কোনও বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল না। তাদের নাম করে এই সব ঘটানো হচ্ছে।
ওই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সূত্রপাত। প্রতিবাদ দেখান স্থানীয়েরা। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়ান তাঁরা। অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের উপর চড়াও হন কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা। মারধরের অভিযোগও ওঠে। অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমের কয়েকটি গাড়িতে হামলা চালানো হয়। গাড়িগুলি ধাওয়াও করা হয় কয়েক কিলোমিটার। ঘটনার পর থেকেই এলাকা থমথমে। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, আপতত বিএসএফ চেকপোস্টের সামনে সংবাদমাধ্যমকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না।