ধান কাটতে গিয়ে চন্দ্রবোড়া সাপের ছোবল খেতে হয়েছিল তাঁকে। দুু’সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পরে মৃত্যু হল সেই চাষির। ধানখেতে সাপের ছোবলে ফের এক মৃত্যুর জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে জেলায়। চাষিরা জানাচ্ছেন, মাঠে পাকা ধান পড়ে থাকলেও সেই ধান কাটার কাজে শ্রমিক মিলছে না।
ধান কাটার সময় চন্দ্রবোড়া সাপ ছোবল মেরেছিল সাঁইথিয়ার আমোদপুরের কুসুমযাত্রা গ্রামের চাষি কালীপদ দাসকে। তার ১৭ দিনের মাথায় মৃত্যু হয়েছে বছর তিপান্নর কালীপদর। এর আগে লাভপুরের ইন্দাসে এক জন ও বিপ্রটিকুরীতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে সাপের ছোবলে। স্থানীয়রা জানান, এর জেরে আমোদপুর এলাকায় মাঠে নামতেই ভয় পাচ্ছেন চাষিরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দিন কয়েক আগেই নিজের জমিতে ধান কাটতে গিয়েছিলেন কালীপদ। জমিতেই তাঁকে চন্দ্রবোড়া সাপ ছোবল মারে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বোলপুর সিয়ান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৭ দিনের মাথায়, সোমবার গভীর রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় ওই কালীপদর। ওই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে চাষিদের মধ্যে।
চাষিরা জানাচ্ছেন, দু’দিন আগেই মেশিনে ধান কাটার সময় প্রায় ছ’ফুটের একটি চন্দ্রবোড়া সাপ কাটা পড়ে। তাই ধান কাটা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন চাষিরা। সাঁইথিয়ার কুসুমযাত্রা, টেকোড্ডা, কুরুমসাহা, ক্ষতিপুর, ভ্রমরকোল, কল্যাণপুরের মতো এলাকায় ধান কাটতে মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছেন চাষিরা। তাঁদের ধারণা, পাশেই রয়েছে বক্রেশ্বর নদ। সেখান থেকেই সমস্ত সাপ উঠে ধান জমিতে ঢুকে পড়ছে। চাষিরা জানাচ্ছেন, সাপের আতঙ্কে বেশি টাকা দিয়েও ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সমস্যায় পড়তে হয়েছে ধান চাষিদের।
কুসুমযাত্রা গ্রামের ধান চাষি প্রভাকর পাল বলেন, “আমাদের এই এলাকায় যেভাবে সাপ দেখা যাচ্ছে, তাতে এই মুহূর্তে কেউ মাঠে নামতে পারছে না।’’ তিনি জানান, যাঁদের টাকা রয়েছে তাঁরা মেশিনের সাহায্যে ধান কাটছেন। যাঁদের বাড়িতে গরু, মোষ রয়েছে, তাঁরা ভয়ে ভয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অল্প অল্প করে ধান কাটছেন। বাকি ধান জমিতেই পড়ে রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের গ্রামের দু’জনকে সাপে কামড়েছে। তার মধ্যে একজন সুস্থ রয়েছেন। আর একজন মারা গিয়েছেন।’’
একই সুরে ক্ষতিপুর গ্রামের ধান চাষি নটোনারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ও লালু মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের এই এলাকার ধান জমিতে যেভাবে সাপের উপদ্রব দেখা যাচ্ছে, তাতে কেউ ভয়ে মাঠে নামতে পারছে না।’’ ভ্রমরকোলের চাষি পরিমল বন্দ্যোপাধ্যায় ও কল্যাণপুরের ধান চাষি হালিম শেখ বলেন, ‘‘মেশিনের সাহায্যে ধান কাটার কাজ চলছে। সাপের আতঙ্কে ধান কাটতে শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। বেশ সমস্যা হচ্ছে।’’ সাঁইথিয়া থানার উদ্যোগে চাষিদের নিয়ে সাপ সম্পর্কে সচেতনতার প্রচার শুরু করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বিধায়ক নীলাবতি সাহা। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি এলাকায় যাতে সচেতনতা প্রচার চালানো যায় সেই চেষ্টা আমরা করছি।’’
কেবল আমোদপুর নয়, বোলপুরের সাহেবডাঙা, সর্বানন্দপুর, কঙ্কালীতলা, লাভপুর প্রভৃতি এলাকায় চন্দ্রবোড়ার উপদ্রব বেড়েছে। বোলপুরের যদুপুরে চন্দ্রবোড়া সাপ পিটিয়ে মারার ঘটনাও ঘটেছে। সর্প বিশেষজ্ঞ দীনবন্ধু বিশ্বাসের মতে, বর্তমানে পতিত জমি, ঝোপ, জঙ্গল সাফ করে চাষ করা হচ্ছে। ফলে সাপেদের থাকার জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। সে কারণেই সাপ বেশি বাইরে বেরিয়ে পড়ছে। তিনি আরও জানান, চন্দ্রবোড়া সাপ ৬০টির বেশি বাচ্চা প্রসব করে। আগে এদের ধ্বংস করত চিল, শকুন, গোসাপেরা। এখন তাদের সংখ্যাও কমে গেছে। ফলে সাপের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তাঁর পরামর্শ, ‘‘চাষিদের গামবুট পরে ধান জমিতে নামতে হবে এবং জমির এক ধার দিয়ে ধান কাটতে হবে। যদি সাপ দেখা যায় দ্রুত বন দফতরে খবর দিতে হবে।’’