• উত্তরবঙ্গের মহিলাদের হাতে তৈরি চায়ের বাজার ধরবে তিস্তা ব্র্যান্ড, যাবে বিদেশেও
    বর্তমান | ২০ নভেম্বর ২০২৫
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: টিনের চালের ঘরের সামনে ছোট্ট উঠোনে মাটির উনুন। তার উপর চাপানো রান্নার কড়াই। হালকা আঁচে সেই কড়াইয়ে কখনও সেদ্ধ হচ্ছে কাঁচা চা পাতা। কখনও বা রোস্ট হচ্ছে দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি। উনুনের পাশে পিঁড়িতে বসে নিখুঁতভাবে সবটা পরিচালনা করছেন গ্রামের মহিলারা। তাঁদের হাতের ছোঁয়ায় একাধিক ধাপ পেরিয়ে তৈরি হচ্ছে গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি কিংবা হোয়াইট টি। জলপাইগুড়ির রামসাইয়ের বাসিন্দা দীপ্তি রায়, সরবালা রায়ের মতো মহিলাদের হাতে তৈরি ওই চা বাজারজাত করতে এগিয়ে এসেছে কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিস্টা)। তাদেরই উদ্যোগে জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতি ‘তিস্তা’ ব্র্যান্ডের মাধ্যমে উত্তরের মহিলাদের হ্যান্ড মেড চায়ের মার্কেটিংয়ে নেমেছে।

    আগামী ১৫-১৬ জানুয়ারি কলকাতার মিলনমেলায় রাজ্য সরকারের হর্টিকালচার দপ্তরের উদ্যোগে যে মেলা রয়েছে, সেখানে প্রথমবারের জন্য নিজেদের হাতে তৈরি চা নিয়ে হাজির হচ্ছেন দীপ্তি, জ্যোতিকা, সরবালার মতো প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলারা। টি বোর্ড এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে দেশীয় বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি যাতে ডুয়ার্সের মহিলাদের হাতে তৈরি চা বিদেশে পাঠানো যায়, তারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিস্টার সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী।

    গত মে মাসে উত্তরবঙ্গ সফরে এসে শিলিগুড়িতে শ্যামশ্রী রায় কর্মকার নামে জলপাইগুড়ির এক মহিলার কাছ থেকে হ্যান্ড মেড হার্বাল টি কিনেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর থেকেই উৎসাহ বেড়েছে উত্তরের মহিলাদের। দ্বিগুণ উৎসাহে জলপাইগুড়ির ‘চা কন্যা’ শ্যামশ্রী তো বটেই, দীপ্তি কিংবা সরবালার মতো মহিলারা চা তৈরির কাজে ঝুঁকেছেন। এঁদের কাছে কাঁচা চা পাতা শুকানোর জন্য মেশিন নেই। কিংবা নেই চা পাতা প্রসেসিং মেশিনও। সেসব চান না তাঁরা। নিজেদের হাতে তৈরি চায়ে তাঁরা জিততে চান চা প্রেমীদের মন। কিন্তু সমস্যা একটাই, কমবেশি চা তৈরি করলেও তা বিক্রির মতো বাজার পাচ্ছেন না তাঁরা। ফলে অনেকে হারিয়ে ফেলছেন উৎসাহ। মঙ্গলবার সিস্টার উদ্যোগে জলপাইগুড়িতে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেখানে টি বোর্ডের আধিকারিকদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন দেশ-বিদেশে ক্ষুদ্র চা চাষিদের উন্নয়নে কাজ করা সংস্থা।

    রামসাইয়ের বাসিন্দা দীপ্তি রায় বলেন, আমাদের বাড়ির পাশেই গোরুমারার জঙ্গল। বন্যপ্রাণীর আক্রমণের ভয়। তার মধ্যেও স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে আমরা বাগান থেকে নিজেরাই কাঁচা পাতা তুলে চা বানাচ্ছি। কখনও সূর্যের আলোয়, কখনও উনুনে কড়াইয়ে পাতা রোস্ট করে চা বানাই আমরা। কিন্তু সেভাবে বাজার পাচ্ছি না। টি বোর্ডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর নিপুন বর্মন বলেন, আমরা চাই, গ্রামের মহিলারা আরও বেশি করে হ্যান্ড মেড টি তৈরি করুন। আমাদের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।

    বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, চীনে এভাবে মহিলাদের চা তৈরি করতে দেখা যায়। অসমেও হ্যান্ড মেড টি জনপ্রিয় হচ্ছে। ডুয়ার্সের মহিলাদের হাতে তৈরি চায়ের বাজার পাইয়ে দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)