বনগাঁর ৬ কাউন্সিলরের বাড়িতে গুলি-বোমাবাজি! পুরচেয়ারম্যান নিয়ে জটিলতার জের?
প্রতিদিন | ২০ নভেম্বর ২০২৫
জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠকে নিয়ে চলছে জোর চাপানউতোর। তারই মাঝে তৃণমূলের ৬ কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড সভাপতির বাড়িতে দুষ্কৃতী তাণ্ডব। শূন্যে গুলি চালানো হয় বলেও অভিযোগ। বনগাঁ থানার পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে। এই ঘটনার নেপথ্য কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। যা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই গোটা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়।
বুধবার রাতে প্রথম হামলা হয় বনগাঁ পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শিখা ঘোষ ও তৃণমূল ওয়ার্ড সভাপতি উত্তম ঘোষের বাড়িতে। অভিযোগ, তাঁদের বাড়ির সামনে ইট ছোড়া হয়। গালিগালাজও করে একদল মদ্যপ যুবক। সিসিটিভিও ভাঙচুর করা হয়। কাউন্সিলর শিখা ঘোষের স্বামী উত্তম ঘোষ জানান, “প্রায় শতাধিক বাইক বাহিনী বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। গালিগালাজ করে ইট ছোড়া হয়। হামলায় সিসি ক্যামেরাও ভেঙে দেওয়া হয়।” পুলিশকে খবর দেওয়া হলেও দেরিতে আসে বলেই অভিযোগ। এরপর একে একে বনগাঁ পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দিপালী বিশ্বাসের বাড়িতেও দুষ্কৃতী হামলা চলে। ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল শর্মিলা দাস বৈরাগীর বাড়িতে দুষ্কৃতীরা ৬ রাউন্ড গুলি চালায় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বন্দনা কীর্তনীয়া ও বন্দনা মুন্সির বাড়ির সামনেও বোমাবাজি হয় বলেই অভিযোগ। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বন্দনা কীর্তনীয়া জানান, “দলের সঙ্গে আছি। তবে আমি গোপাল শেঠের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে সই করিনি। সে কারণে হামলা হলেও হতে পারে। তবে এমন বোমাবাজি করে ভয় দেখানো যাবে না।” ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শম্পা মোহন্তর বাড়ির সামনে গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে ৷ কাউন্সিলরদের বাড়িতে বোমাবাজির পর বনগাঁর পুরচেয়ারম্যান গোপাল শেঠ ‘ঘনিষ্ঠ’ রাজা হালদারের বাড়িতেও হামলা চলে বলেও অভিযোগ। তাঁর বাড়ির সিসিটিভি এবং জানলার কাচ ভাঙা হয় বলেই দাবি।
উল্লেখ্য, চাহিদা অনুযায়ী নাগরিক পরিষেবা দিতে ব্যর্থতা-সহ জলযন্ত্রণা নিয়ে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কয়েকমাস আগে তৃণমূলের ভোটকুশলী সংস্থার সমীক্ষার রিপোর্টে এমনটাই উঠে আসে। সঙ্গে গত লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডের সবকটিতেই তৃণমূলের হারের কারণও সামনে এসেছে। এসবের জেরে বনগাঁ পুরসভায় চেয়ারম্যান বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। সেইমতো গত শুক্রবার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিল রাজ্য নেতৃত্ব। কিন্তু দলীয় নির্দেশের মান্যতা দেননি গোপাল। পাঠাননি ইস্তফাপত্রও। এরপরেই গোপাল শেঠকে শোকজের চিঠি পাঠায় বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল। চিঠিতে দলীয় নির্দেশ অন্যান্য করার কারণ জানতে চাওয়া হয়। শুধু তাই নয়, পদত্যাগের জন্য সাতদিনের সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরেও নিজের অবস্থানে অনড় গোপালবাবু। এখনও পুরসভার চেয়ারম্যান পদ আঁকড়ে তিনি! সাময়িক ছুটিতে যাওয়ার কথা জানান গোপাল শেঠ। তাঁর পরিবর্তে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুরজিৎ দাসকে দায়িত্বভার দিয়ে ছুটিতে যান ৷ যদিও সুরজিৎ দাসকে পৌরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার নিয়মের জটিলতার কারণে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে দেননি। তারপরই বুধবার বনগাঁ তৃণমূল জেলা পার্টি অফিসে বৈঠক করে অনাস্থা আবেদন জানান ৯ জন কাউন্সিলর। হামলার ঘটনায় পুরচেয়ারম্যান নিয়ে জটিলতা যুক্ত কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।