সাজার আগে নিহতের মা-আত্মীয়ের ছবি তুলে হুমকি! হাড়হিম ঘটনা বারাসত আদালতে
প্রতিদিন | ২১ নভেম্বর ২০২৫
অর্ণব দাস, বারাসত: খুনের ঘটনায় দোষীর সাজা ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু আগেই আদালত চত্ত্বরে নিহত কিশোরের মা ও আত্মীয়ের ছবি তুলে হুমকির অভিযোগ। বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে এই অভিযোগ জানালেন নিহতের মা। বৃহস্পতিবার এনজার নবী নামে ওই ‘খুনি’কে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে বারাসত আদালত। এই খবর শোনার পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয় কিশোরের মা বললেন, “আমি ও ননদ আদালতে বসে ছিলাম। সাজা ঘোষণার আগেই ওর (এনজার নবী) মেয়ে আমাদের ফটো তুলল। তারপর একজন খুনের আসামি যার এদিন তারিখ ছিল, তাকে মেসেজ করল। আমার আরেক সন্তান রয়েছে। তাই এই ঘটনায় খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।”
নিহতের পিসি হোসনেআরা বেগমের দাবি, “ফটো তোলার পর মেয়েটি যার সঙ্গে কথা বলেছিল, সে খুন করে চারমাসের মধ্যে জেল থেকে বেরিয়ে গিয়েছে, এমনটা শুনেছি। তাকেই হয়ত আমাদের ছবি পাঠিয়েছে।” এনিয়ে পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খরিয়ার স্পষ্ট বক্তব্য, “দোষীর মেয়ে নিহতের পরিবারের দুজনের ফটো তুলেছে কোনও আসামিকে দিয়েছে। আমি ওনাদের লিখিত অভিযোগ জানাতে বলেছি। তারপর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রসঙ্গত, বারাসতের কাজিপাড়ার বাসিন্দা গোলাম নবীর সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিবাদ ছিল তাঁর ভাই এনজার নবীর। এর মধ্যে পৈতৃক জমিতে একটা তালগাছ কাটা নিয়ে বিবাদ চরমে ওঠে। এরপরই গত ২০২৪ সালের ৯ জুন বিকেলের পর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ যায় গোলামের ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ফারদিন। শেষে ১৩ জুন বাড়ি লাগোয়া পরিত্যক্ত বাথরুমের ভিতর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় কিশোরের মৃতদের উদ্ধার করে পুলিশ। তখন এনজার নিজেকে সন্দেহের বাইরে রাখতে এলাকায় ছেলেধরার গুজব রটিয়ে দেয়। সেই গুজব দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়লে জায়গায় জায়গায় শুরু হয় বিক্ষোভ। কাজিপাড়ার ঘটনায় গুজব রটার পর রাজ্যের একাধিক জায়গায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। শেষে তদন্তে নেমে ১৯ জুন এনজার নবীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের কারণের ভাইয়ের ছেলেকে শ্বাসরোধ করে খুনের পর গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছিল এনজার। মামলা চলে বারাসত আদালতের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা কোর্টের বিচারক প্রজ্ঞাগার্গী ভট্টাচার্যর (হুসেন) এজলাসে। চার্জশিট জমা পড়ে ৫ সেপ্টেম্বর। ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি চার্জফ্রেম হয়ে ট্রায়াল চলাকালীন ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
শেষে ঘটনার দেড় বছরের মধ্যে ফারদিন খুনে তারই জেঠু এনজার নবীকে অপহরণ, খুন এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাটের দায়ে সোমবার দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। এদিন তাঁর আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা হয়। মামলার সরকারি আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা বলেন, “৩০২ খুনের ধারায় দোষীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা-সহ ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দিয়েছেন। অপহরণ এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাটের ধারায় সাত বছর করে কারাদণ্ড-সহ ৫০ হাজার টাকার জরিমানা। সাত বছরের কারাদণ্ডের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সময় শুরু হবে।”