• পাঁশকুড়ার পরে তমলুক, সরলেন নন্দ-দীপেন্দ্র, ভোটে প্রভাব পড়বে?
    এই সময় | ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া

    পাঁশকুড়ার পরে তমলুক। ফের অপসারিত পুরপ্রধান। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় দুই পুরসভার চেয়ারম্যান এবং চেয়ারপার্সনকে অপসারণ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চর্চা। পদ হারিয়ে দুই পুরসভার প্রাক্তন প্রধান নন্দকুমার মিশ্র এবং দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় রাজনৈতিক ভাবে কার্যত কোণঠাসা। বিধানসভা ভোটের আগে এই অপসারণ শাসকের ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তৃণমূলেরও একাংশ। দল বদলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না দীপেন্দ্রনারায়ণ। তমলুক রাজ পরিবারের বংশধর দীপেন্দ্রনারায়ণ ১৯৯৮-এ তৃণমূলে যোগ দেন। ২০০০-এ তৃণমূলের টিকিটে তাম্রলিপ্ত পুরসভার কাউন্সিলার হন।

    ২০০২-এ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান। পরে ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত আবার ভাইস চেয়ারম্যান হন। আর ২০২১-২২ ছিলেন পুরসভার চেয়ারপার্সন। ২০২২-এ ভোটে জিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন দীপেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন বলে পরিচিত দীপেন্দ্রকে পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার দু'বছর আগেই দলীয় নির্দেশে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মমতার পুরোনো রাজনৈতিক সঙ্গী নন্দকুমারকেও সম্প্রতি পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন পদ থেকে সরানো হয়েছে। এই দুই বর্ষীয়ান নেতার অপসারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তৃণমূলের পুরোনো নেতা-কর্মীরা। সামনের বছর বিধানসভা নির্বাচন।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার কথায়, 'পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বিজেপির বাড়বাড়ন্ত আমাদের মাথাব্যথার কারণ। বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দীপেন্দ্রনারায়ণকে সরানো উচিত হয়নি। নন্দকুমারকেও পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারপার্সনের পদ থেকে সরানো ঠিক হয়নি। দলের একাংশ জেলাটাকে বিজেপির হাতে তুলে দিতে চাইছে।'

    পদচ্যুতদের গেরুয়া শিবিরে আহ্বান জানিয়ে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সিন্টু সেনাপতি বলছেন, 'দীপেন্দ্রনারায়ণ এবং নন্দকুমার বর্ষীয়ান নেতা। ওঁদের মতো সৎ এবং অভিজ্ঞ নেতাদের তৃণমূল ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। তৃণমূলে এখন আর সৎ লোকের জায়গা নেই। আমি বলব বিজেপিতে যোগ দিন।'

    দীপেন্দ্রনারায়ণ অবশ্য বলছেন, 'দল বদল করব কিনা, তা বলার সময় এখনও আসেনি।' আর নন্দকুমারের কথায়, 'ভোট বাক্সে এর প্রভাব পড়বে কিনা সেটা সময় বলবে। তৃণমূলের জন্মের আগে থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজনীতি করি। আমার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে সেটা ঠিক করবেন দিদি।'

    তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজিতকুমার রায় বলেন, 'দল যখন যাঁকে যে কাজ করার সুযোগ দেবে, তাঁকে সেই কাজ করতে হবে। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নির্বাচনে এর কোনও প্রভাব পড়বে না।'

    তমলুকের নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন চঞ্চল খাঁড়া। তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন দলের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কাউন্সিলার পার্থসারথি মাইতি। বলছেন, 'চঞ্চল খাঁড়া আপাদমস্তক দুর্নীতিপরায়ণ। টাকা দিয়ে অস্থায়ী চেয়ারম্যান হয়েছেন।' যদিও তাঁকে নিয়ে আশাবাদী শহরবাসীর একাংশ।

    শহরের বাসিন্দা কৃতিসুন্দর পাল বলছেন, 'চঞ্চল উদ্যমী। এত কম বয়সে আগে কেউ তমলুকের পুরপ্রধান হননি।' আর এক বাসিন্দা রাজর্ষি মহাপাত্র বলছেন, 'কোন চেয়ারম্যান ভালো, তা জানতে অন্তত এক মাস অপেক্ষা করতে হবে। রাস্তাঘাট, পথবাতি, নিকাশির উন্নতি হলে বলব আগের চেয়ারম্যানকে সরানোর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।'

  • Link to this news (এই সময়)