• অনির্দিষ্টকাল বিল আটকে রাখা যাবে না: সুপ্রিম কোর্ট, রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের সময়সীমা বাধার সংস্থান নেই
    বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • নয়াদিল্লি: আইনসভায় পাশ পাওয়া বিলে সম্মতিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালদের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া যায় না। বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতিক্রমে জানাল সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। তবে একইসঙ্গে শীর্ষ আদালত স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল আটকে রাখার ক্ষেত্রে রাজ্যপালদের অবাধ ক্ষমতা রয়েছে বলেও আমরা মনে করি না। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিল আটকে রাখতে পারেন না তাঁরা।  এক্ষেত্রে রাজ্যপালদের ‘দীর্ঘ নিষ্ক্রিয়তা’ সীমাবদ্ধভাবে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার মুখে পড়তে পারে। বিল নিয়ে রাজ্যপালদের ‘যুক্তিসঙ্গত সময়ে’র মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলতে পারে আদালত।

    পাশ হওয়া বিল নিয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রশ্নে রাজ্যপালদের ক্ষমতা কতটা? এবিষয়ে বিশেষ ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর তরফে পেশ হওয়া ‘প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স’ নিয়ে এদিন রায় ঘোষণা করেছে প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। এর আগে তামিলনাড়ু সরকার বনাম রাজ্যপাল মামলায় গত ৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টই তাৎপর্যপূর্ণ রায় দিয়েছিল। বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছিল, কোনও বিল অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলিয়ে রাখতে পারেন না রাজ্যপালরা। এব্যাপারে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের মতো সাংবিধানিক পদাধিকারীদের জন্য আদালত কি এভাবে সময়সীমা বেঁধে দিতে পারে? এবিষয়ে রাষ্ট্রপতি ১৪৩ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতাবলে মোট ১৪টি প্রশ্ন সহ সুপ্রিম কোর্টের ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এপ্রিল মাসের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, তিন মাসের মধ্যে রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত না জানালে বিলটি নিজে থেকেই পাশ হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। যদিও এদিন সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছে, সংবিধান এরকম কোনও ধারণার অনুমোদন দেয়নি। একইসঙ্গে শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজ্যপালদের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়াটা আমাদের সংবিধানে যে ‘স্থিতিস্থাপকতা’ রয়েছে তার পরিপন্থী। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছে, ২০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজ্যপালদের কাছে তিনটি রাস্তা খোলা থাকে। বিলে সম্মতি প্রদান, সেটিকে রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পাঠানো অথবা নিজের মন্তব্য সহ পুনর্বিবেচনার জন্য বিধানসভায় ফেরত পাঠানো। এক্ষেত্রে সংবিধান কোনও সময় বেঁধে দেয়নি।  তাই আদালতের তরফে সময় বেঁধে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া ঠিক হবে না। বিলে সম্মতি প্রদানের সিদ্ধান্ত রাজ্যপাল যুক্তিসঙ্গত কারণ ও ব্যাখ্যা ছাড়াই অনিদিষ্টকাল ঝুলিয়ে রাখলে আদালত ‘সীমাবদ্ধ পরিসরে’ আদেশ জারি করতে পারে। শীর্ষ আদালতের এদিনের মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে ডিএমকে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি আবার একে ‘শোচনীয়’ আখ্যা দিয়েছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)