দেশের অর্ধেক শিশু স্বাস্থ্য-শিক্ষার মতো পরিষেবাই পায় না, চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট ইউনিসেফের
বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৫
নয়াদিল্লি: মোদি সরকারের প্রকল্প আছে। তা নিয়ে প্রচার কম হয় না। বিজ্ঞাপনেই খরচ হয়ে যায় শত শত কোটি। এত কিছুর পরও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিস্রুত পানীয় জলের মতো ন্যূনতম পরিষেবা পৌঁছচ্ছেই না দেশের অর্ধেক শিশুর কাছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ব শিশু দিবসে ভারতের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে এমনই উদ্বেগজনক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ইউনেস্কো। আন্তর্জাতিক সংস্থা জানিয়েছে, ছ’টি প্রাথমিক পরিষেবা প্রতিটি শিশুর অধিকার। সেগুলি হল— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাস, পুষ্টি, পরিস্রুত পানীয় জল ও পরিচ্ছন্ন শৌচ। কিন্তু, ভারতের প্রায় ২০ কোটি ৬০ লক্ষ শিশু এই পরিষেবারগুলির একটিও পাচ্ছে না। সংখ্যার নিরিখে এরাই দেশের মোট শিশু জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। ফলে প্রশ্ন উঠছে, পোষণ অভিযান, সমগ্র শিক্ষা, মিড ডে মিল, বেটি বাঁচাও-বেটি পড়াও, স্বচ্ছ ভারত মিশনের মতো প্রকল্পগুলি আদৌ কাজে আসছে তো? নাকি সবই মোদি সরকারের ‘ফাঁপা’ প্রচার? কোথায় যাচ্ছে ব্যয় হওয়া কোটি কোটি টাকা?
দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীর সংখ্যা অর্ধেকের কমে নামিয়ে আনাই এখন মোদি সরকারের টার্গেট। স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী ধার্য হয়েছে ডেডলাইন, ২০৩০ সাল। কেন্দ্রের দাবি, এই লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে চলেছে দেশ। মুদ্রার অন্য পিঠে রয়েছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের করুণ কাহিনি। সেটাই বেআব্রু হয়ে গিয়েছে এদিন ইউনেস্কোর ‘দ্য স্টেট অব দ্য ওয়ার্ল্ডস চিলড্রেন ২০২৫: এন্ডিং চাইল্ড প্রোভার্টি—আওয়ার শেয়ার্ড ইমপারেটিভ’ শীর্ষক রিপোর্টে। তাতে এও বলা হয়েছে, অন্তত দু’টি বা তার বেশি প্রাথমিক পরিষেবা পাচ্ছে না দেশের আরও প্রায় ৬ কোটি ২০ লক্ষ শিশু। এই খামতি মেটাতে সরকারকেই উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইউনিসেফের ভারতীয় শাখার প্রতিনিধি সিন্থিয়া ম্যাককাফ্রে মনে করিয়ে দিয়েছেন, শিশুদের উপর বিনিয়োগের থেকে ভালো কিছু হতে পারে না। সমাজকল্যাণমূলক প্রতিটি সরকারি সিদ্ধান্তে ভবিষৎ প্রজন্মকে প্রাধান্য দিতে হবে। অর্থাৎ তিনি ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, শিশু ও তাদের সম্পর্কিত প্রকল্পগুলিকে অবজ্ঞা করলে দেশের উন্নয়নই ধাক্কা খাবে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির ডঃ পিনাকী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, শিশু সম্পর্কিত প্রকল্পগুলিতে আর্থিক রক্ষাকবচ অত্যন্ত জরুরি। অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডঃ নীলাঞ্জন ঘোষের মতে, শিশুদের উপর স্থিতিশীল বিনিয়োগই দেশের প্রকৃত উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। কারণ, তাদের উপর লগ্নি করলে ভবিষ্যতে আর্থিক ও সামজিক ক্ষেত্রে বিপুল প্রতিদান মিলবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউনিসেফের আর্জি, শিশু অধিকারকে আরও গুরুত্ব দেওয়া হোক। ভারতের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। যদিও কেন্দ্রের সেই উদ্যোগ যে প্রকৃত সমস্যা মেটাতে পর্যাপ্ত নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে প্রকাশিত তথ্য ও পরিসংখ্যান।