• ‘মা, শেষবারের মতো তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি’, শিক্ষকদের ‘হেনস্তায়’ বিপর্যস্ত দিল্লির কিশোরের সুইসাইড নোট
    বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • নয়াদিল্লি: ‘আই কুইট’—দেওয়ালে লেখা ছিল এই দু’টি শব্দ! পাশে ঝুলছিল জয় লোবোর দেহ। ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমার এই দৃশ্য সাক্ষী কলেজ প্রিন্সিপাল বীরু সহস্ত্রবুদ্ধির মানসিক অত্যাচারের। তারই যেন পুনরাবৃত্তি খাস রাজধানীতে। মেট্রোর প্ল্যাটফর্ম থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হল দিল্লির নামজাদা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র শৌর্য পাটিল। ব্যাগে রাখা ছিল ছোট্ট একটি চিঠি। ‘সরি মা, এতবার তোমার মন ভেঙেছি। আজ শেষবারের মতো তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি। স্কুলের শিক্ষকরাই যদি এরকম হন, তাহলে আর কী করা যাবে! ...।’ মাকে লেখা শেষ চিঠি নাকি সুইসাইড নোট!

    এই ঘটনায় স্কুলের দিকে আঙুল তুলেছে পরিবার। অভিযোগ, ক্লাসে লাগাতার নির্যাতন চালাতেন শিক্ষকরা। সেই ‘অত্যাচার’ সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যা করেছে শৌর্য। এই অভিযোগ সামনে আসার পরেই দিল্লিজুড়ে আওয়াজ উঠেছে, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’! সোশ্যাল মিডিয়ায় শৌর্যের মৃত্যুতে ন্যায়বিচার চেয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ডাক দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শৌর্যের ছবি, পোস্টার, ব্যানার নিয়ে স্কুলের গেটের বাইরে প্রতিবাদ দেখান বহু মানুষ। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তোলেন। এর পরেই প্রিন্সিপাল অপরাজিতা পালের পাশাপাশি তিন অভিযুক্ত শিক্ষক— জুলি ভার্গেস, মনু কালরা ও যুক্তি আগরওয়াল মহাজনকে সাসপেন্ড করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

    জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ সেন্ট্রাল দিল্লির রাজেন্দ্র প্লেস মেট্রো স্টেশনে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয় ওই কিশোর। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা তার স্কুলব্যাগ থেকে একটি চিঠি উদ্ধার করে পুলিশ। তাতে বাবা-মা’র উদ্দেশে এও লেখা ছিল, ‘ওঁদের (শিক্ষকদের) বিরুদ্ধে তোমরা পদক্ষেপ নিও, যাতে আর কোনও বাচ্চা আমার মতো কিছু না করে বসে। তোমাদের কাছে এটাই আমার শেষ চাওয়া।’ এরপরে ছিল বাবার উদ্দেশে কয়েক লাইন... ‘সরি পাপা, তোমার মতো ভালো মানুষ হতে পারলাম না। আমি দুঃখিত। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকরাই আমাকে এপথে ঠেলে দিলেন।’ ভাইয়ের কাছেও ক্ষমা চেয়েছিল সে। চিঠির শেষে বাবার নম্বর লিখে রেখেছিল শৌর্য। সঙ্গে নিজের শেষ ইচ্ছের কথাও, ‘যদি দেহের কোনও অঙ্গ কাজ করার মতো অবস্থায় থাকে, তা যেন দান করা হয়।’

    পরিবার সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকাল ৭টা ১৫ নাগাদ শৌর্য স্কুলে রওনা হয়। দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ বাবা প্রদীপ পাটিল জানতে পারেন ছেলের দুর্ঘটনার কথা। তড়িঘড়ি হাসপাতালে পৌঁছোনোমাত্র শৌর্যের মৃত্যু সংবাদ মেলে। বুধবার স্কুলের প্রিন্সিপাল ও তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন প্রদীপ। মহারাষ্ট্রের সাংলির বাড়িতে ছেলের শেষকৃত্যের আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, শৌর্য প্রতিদিনই গাড়ি করে স্কুলে যাতায়াত করত। কিন্তু মঙ্গলবার ও স্কুলের পিছন গেট দিয়ে বের হয়ে মেট্রো স্টেশনে চলে যায়। কিন্তু কেন সে এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হল? প্রদীপের দাবি, ‘ছেলের সঙ্গে গত এক বছর ধরে ক্লাসে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছিল। কিন্তু অভিযোগ করতে গেলে উলটে শুনতে হত, ও ক্লাসে মনোযোগী নয়। ছেলের বন্ধুরা জানিয়েছে, গত চারদিন ধরে ওর উপর অকথ্য মানসিক নির্যাতন হচ্ছিল। ওকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে, টিসি দেওয়া হবে ইত্যাদি বলা হচ্ছিল। গত মঙ্গলবার স্টেজে নাচ প্র্যাকটিসের সময় শৌর্য পড়ে যায়। ব্যথায় কেঁদেও ফেলে। কিন্তু সহানুভূতি দূরে থাক, ওই অবস্থাতেই তাকে নাচের দল থেকে বের করে দেন এক শিক্ষক। অপর এক শিক্ষক তো এও বলেন, যতই কাঁদো না কেন, আমার কিছুই যায় আসে না। প্রিন্সিপাল সেখানে হাজির থাকলেও হস্তক্ষেপ করেননি।’ যদিও স্কুল কাউন্সেলরের বক্তব্য, শৌর্য আত্মহত্যাপ্রবণ ছিল। অন্যরাও তা জানিয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)