বেড়াজাল ভেঙে বীরাঙ্গনা আসমা, হাবিবারা, ৩২ জনের লড়াইকে কুর্নিশ রাজ্য সরকারের
বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৫
ব্রতীন দাস, মালদহ: আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের আসমা খাতুনের। কিন্তু বাড়ি থেকে জোর করে তার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। শত অনুরোধেও কাজ না হওয়ায় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে চিঠি লেখে রায়গঞ্জ দেবীনগর প্রমোদাসুন্দরী গার্লস হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী। এরপরই রায়গঞ্জের বড়ুয়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দা আসমার বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার রক্ষা দিবসে রাজ্য সরকারের নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের শিশু সুরক্ষা আয়োগের উদ্যোগে অনুষ্ঠানে বীরাঙ্গনা পুরস্কারে সম্মানিত করা হল ওই ছাত্রীকে। বড় হয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তার। মালদহের দুর্গাকিংকর সদনে আসমাকে ওই সম্মান দেওয়া হয়। আসমার সঙ্গে রাজ্যের ৩২ জন কিশোর ও কিশোরী যারা নানা ক্ষেত্রে অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, তাদের বীরপুরুষ ও বীরাঙ্গনা পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় এদিন।
আসমার তো তাও বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়েছিল, কিন্তু মালদহের রতুয়ার হবিবপুরের হাবিবা খাতুনের ক্ষেত্রে বরযাত্রী ও নিমন্ত্রিতরা বাড়িতে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন। এমন সময় বান্ধবীদের সহায়তায় কনের সাজেই বাড়ি থেকে পালায় মহারাজপুর কেফাতুল্লা হাইস্কুলের ১৪ বছরের ওই কিশোরী। সটান চলে আসে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকার বাড়িতে। প্রশাসনের সহযোগিতায় বন্ধ হয় তার বিয়ে। বড় হয়ে পুলিশ হতে চায় হাবিবা। অভাব কিংবা পারিবারিক কারণে বয়স ১৮ হওয়ার আগেই মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেওয়ার ঘটনা শোনা যায়, কিন্তু সাবালক হওয়ার আগেই বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে, সচরাচর শোনা যায় না। এটাই হয়েছিল হাওড়ার রোহিত শিকারির সঙ্গে। ১৭ বছরেই তার বিয়ে দিতে চেয়েছিল পরিবার। রোহিত দ্বারস্থ হয় প্রশাসনের। এদিন তাকে বীরপুরুষ সম্মান দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী, চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস সহ বিশিষ্টরা। মালদহের শিশু সুরক্ষা আধিকারিক শিবেন্দু শেখর জানা বলেন, মালদহের মতো জেলায় আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার রক্ষা দিবসের রাজ্যস্তরের অনুষ্ঠান বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। আমাদের জেলার মেয়েরা বীরাঙ্গনা পুরস্কারে সম্মানিত হচ্ছে, এটা খুব আনন্দের।
এদিন যারা পুরস্কার পেয়েছে, তাদের জীবনের গল্প সত্যিই কুর্নিশ করার মতো। যেমন আলিপুরদুয়ারের আরিয়ান ওরাওঁ। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় চিতাবাঘের আক্রমণের মুখে পড়ে সে। অসম যুদ্ধে জিতে সে এখন বীরপুরুষ। আলিপুরদুয়ারের দিয়া তামাং আরেকজন। চা বাগান এলাকার লিখতে, পড়তে জানা প্রথম প্রজন্মের শিশুদের বিনামূল্যে টিউশন পড়াচ্ছে সে। এদিন তাকেও বীরাঙ্গনা সম্মান জানানো হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বীরাঙ্গনা সাধনার (নাম পরিবর্তিত) জীবনের কাহিনী অবশ্য বড্ড মর্মান্তিক। ছোটবেলায় মা ছেড়ে চলে যান। সাত বছর বয়সে বাবার শারীরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় সে। এখন হোমে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, উত্তর ২৪ পরগনার রিনা (নাম পরিবর্তিত) নরক যন্ত্রণা ভোগ করে নতুন সূর্যোদয়ের আশায় দিন গুনছে। সৎ মা তাকে বিক্রি করে দিয়েছিল নিষিদ্ধপল্লিতে। অসহ্য অত্যাচার সহ্য করার পর যখন উদ্ধার করা হয়, সে বিধ্বস্ত। সেই অন্ধকার ভুলে নতুন করে পথ চলতে চায় সে।