সীমান্তের যুবতীরা টার্গেট জেএমবির, প্রশিক্ষিত মহিলা ঘাঁটি গেড়েছে মুর্শিদাবাদে!
বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৫
অভিষেক পাল, বহরমপুর: বাংলায় সংগঠন বিস্তারে এবার নয়া কৌশল নিয়েছে জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। আর সেই কৌশল বাস্তবায়নে অস্ত্র করা হচ্ছে মহিলাদের। সেক্ষেত্রে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর টার্গেট সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির আটপৌরে বধূ থেকে যুবতী-তরুণীরা। বিশেষ সূত্রে এমন চাঞ্চল্যকর ইনপুট পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রের একাধিক সংস্থা। তারা এটাও জানতে পেরেছে, ইতিমধ্যেই সীমান্ত এলাকায় পরিকল্পনা মতো কাজ শুরুও করে দিয়েছে জেএমবি। বাংলাদেশে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে এক সুবেশা মহিলাকে মুর্শিদাবাদ জেলায় পাঠিয়েছে সংগঠনের শীর্ষনেতারা। জেএমবি সাম্রাজ্যে ওই মহিলার ‘কোড নেম’ জেটিকে। সীমান্তের কোনও একটা ঘাঁটিতে সে আত্মগোপন করে রয়েছে বলেও খবর। গ্রামের সাদাসিধে মহিলাদের মগজধোলাই করে দলে টানাই জেটিকের মূল টাস্ক। তাকে এখন জালে তুলে জেএমবির কৌশল বানচাল করাই মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবিউনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে এপারে অনুপ্রবেশের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেই মতো মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ খোলা সীমানায় তৎপরতা বাড়িয়েছে বিএসএফ এবং বিভিন্ন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সীমান্তের গ্রামগুলিতেও চলছে বাড়তি নজরদারি। সেক্ষেত্রে জেএমবির ওই প্রশিক্ষত মহিলা খুব সহজেই যে বাংলাদেশে পালাতে পারবে না, তা একপ্রকার নিশ্চিত গোয়েন্দারা। সেই কারণে যত দ্রুত সম্ভব জেটিকের হদিশ পেতে মরিয়া সকলেই। সূত্রের খবর, ওই মহিলা কী ধরনের কাজ করছে? তার উপর কি দায়িত্ব দিয়েছে জেএমবি নেতারা? সে কোন শ্রেণির মহিলাদের সহানুভূতি আদায় করতে চাইছে?—এসব কিছু সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু করেছেন গোয়েন্দারা।
এপার বাংলায় জঙ্গি-জাল বিছাতে জেএমবি দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ২০২০ সালে সংগঠনের প্রথমসারির সন্ত্রাসবাদী আব্দুল করিম ওরফে বোরো করিম ধরা পড়ে সূতিতে। ২০১৮ সালে বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণ ঘটনায় জড়িত ছিল সে। জেএমবির মাথা সালাউদ্দিন সালাহিনের অন্যতম সঙ্গীও করিম। আত্মগোপন করেছিল সূতিতে। সেখানে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ হানা দিয়ে গ্রেফতার করে। সেই সূত্র ধরে ধুলিয়ান থেকেও গ্রেফতার করা হয় নূর আলম নামে জেএমবির আর এক সক্রিয় সদস্যকে। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, বাংলায় ঘাঁটি গেড়ে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ করতে চাইছে জেএমবি। ২০১৪ সালে পূর্ব বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডেও নাম জড়ায় বাংলাদেশের এই জঙ্গিগোষ্ঠীর। তদন্তে উঠে আসে, ওই বিস্ফোরণের নীলনকশা তৈরি হয়েছিল মুর্শিদাবাদে বসে। তবে, সূতিতে করিমের গ্রেফতারের পর বাংলায় জেএমবির কর্মকাণ্ড থিতু হয়ে যায়। একমাত্র জেলার কিছু এলাকার লিংম্যানরা সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিল। এরমধ্যে অবশ্য বাংলাদেশের আর একটি জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের কার্যকলাপ বাড়তে থাকে মুর্শিদাবাদে।
এবার নতুন করে গোয়েন্দাদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে জেএমবির ওই মহিলা কমান্ডার জেটিকে। সীমান্তবর্তী গ্রামে সেফ হাউস বানিয়ে শীর্ষনেতাদের দেওয়া টাস্ক পালনও করতে শুরু করেছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, জামাতের শীর্ষ নেতারা চাইছে মহিলাদের নিয়ে বেশ কয়েকটি স্লিপার সেল গড়া। ওই সেলগুলিতে গ্রামের যুবতী এবং মহিলাদের বাছাই করে নিয়োগ করতে জেটিকে’কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারপর কাজের ভাগ করে দেওয়া হবে এক একটি সেলকে। সে দায়িত্ব জেটিকে কীভাবে পালন করছে, তা জানতে এখন মরিয়া গোয়েন্দারা।