• চড় উঁচিয়ে হেডস্যারকে হুমকি তৃণমূল নেতাদের, নন্দকুমারের স্কুলে অচলাবস্থা, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা
    বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নন্দকুমার: স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সহ শিক্ষকদের একাংশের দ্বন্দ্বে নাক গলালেন তৃণমূল নেতারা। প্রধান শিক্ষককে আটকানোর জন্য স্কুলের গেট আগলে তাঁরা দাঁড়িয়ে রইলেন। চোখ রাঙিয়ে, সুর চড়িয়ে এবং চড়-থাপ্পড় তুলে প্রধান শিক্ষককে স্কুলের গেট থেকে ফিরে যেতে বাধ্য করলেন। বৃহস্পতিবার নন্দকুমার ব্লকের মল্লিকচক অমরস্মৃতি বিদ্যাপীঠে ওই ঘটনায় প্রবল উত্তেজনা ছড়ায়। প্রধান শিক্ষকের পক্ষে দাঁড়ানো গ্রামবাসী ও অভিভাবকদের অনেকে জড়ো হলে তাঁদের সঙ্গে শাসকদলের নেতাকর্মীদের তুমুল বচসা বাধে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পলাশ রায় বলেন, ওই স্কুলের ঝামেলা মেটাতে আমার অফিসে একাধিকবার মিটিং হয়েছে। চারবার এনকোয়ারি করে রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। একটা স্কুল নিয়ে এভাবে ব্যস্ত থাকলে অফিস চালাব কীভাবে? সহ শিক্ষকদের একাংশ অত্যন্ত বাজে ভাষায় প্রধান শিক্ষককে গালিগালাজ করেন। আমার কাছে তার অডিও এবং ভিডিও রয়েছে।

    মল্লিকচক অমরস্মৃতি বিদ্যাপীঠে প্রধান শিক্ষক তারাপদ শীটের সঙ্গে সহ শিক্ষকদের একটা বড় অংশের আদায়-কাঁচকলায়। তারাপদবাবু অতীতে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তারপর তমলুক শহরের রাধাবল্লভপুর হাইস্কুলে বদলি হন। কিন্তু, একটি মামলায় হাইকোর্ট তাঁকে রাধাবল্লভপুর হাইস্কুল থেকে সরিয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে তিনি ২০২৪ সালে ১৩ আগস্ট ফের পুরনো স্কুল মল্লিকচকে ফিরে যান। তখন থেকেই তাঁকে মেনে নিতে পারছেন না সহ শিক্ষকদের একটা অংশ।

    বুধবার স্কুলের এক পড়ুয়ার অভিভাবক ক্লাস চলাকালীন স্কুলে ঢুকে পড়েন। তিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে অভিযোগ। তিনি প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে সহ শিক্ষকদের একাংশকে গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ। শিক্ষকদের দলাদলির কারণে পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং তাতে স্কুলের মান দিন দিন কমছে বলে ওই অভিভাবকের অভিযোগ। এনিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেইসঙ্গে গালিগালাজও করেন। ওই অভিভাবকের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ নেওয়া হবে না, সেই প্রশ্ন তুলে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের অফিস ঘরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন সহ শিক্ষকদের একাংশ। খবর পেয়ে পরিচালন কমিটির সভাপতি বিষ্ণুপদ বাগ সহ তৃণমূল নেতারা স্কুলে পৌঁছে যান। তাঁরা বৃহস্পতিবার থেকে হেড স্যারকে স্কুলে ঢুকতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

    বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রধান শিক্ষক স্কুল গেটের সামনে হাজির হতেই গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছাড়াও তৃণমূল নেতা নারায়ণ বাগ, মির্জা রফিক, পঞ্চায়েত সদস্য একাদশী দিন্ডা সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা প্রধান শিক্ষককে স্কুলে ঢুকতে বাধা দেন। প্রধান শিক্ষকের পাশে দাঁড়াতে শেখ আশাদুল ইসলাম, সইদুল ইসলাম সহ স্থানীয় মহিলারা ছুটে আসেন। তাঁদের সঙ্গে শাসক দলের নেতাদের তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। প্রধান শিক্ষক ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে ফোন করেন। শেষমেশ হুমকি-ধমকি দিয়ে এবং চড় থাপ্পড় তুলে প্রধান শিক্ষককে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

    প্রধান শিক্ষক বলেন, বুধবার স্কুলে ঢুকে ঝামেলা করায় ওই অভিভাবকের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার থানায় এফআইআর করব বলে জানিয়েছিলাম। তারপরও আমাকে স্কুলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। আমাকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে কয়েকজন স্কুলের নিয়ন্ত্রণ পেতে চা‌ই঩ছে। সেজন্য বার বার ঝামেলা হচ্ছে। তৃণমূল নেতা নারায়ণবাবু বলেন, প্রধান শিক্ষক সুষ্ঠুভাবে স্কুল চালাতে পারছেন না। স্কুল চলাকালীন মদ্যপ ব্যক্তি ঢুকে পড়ছেন। অথচ, তিনি নিশ্চুপ। এর প্রতিবাদে তাঁকে স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
  • Link to this news (বর্তমান)